তারাই সব, তারাই মালিক, আমরা সব প্রজা: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ কখনোই জনগণের বন্ধু ছিল না—এমন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগ একসময় আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গণতন্ত্রের সংগ্রাম করেছে। অথচ স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের চরিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে। তারা সেই গণতন্ত্রের মধ্যে আর নিজেদের ধারণ করতে পারছে না। কারণ, গণতন্ত্র থাকলে ক্ষমতা চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা, ওষুধ বিতরণ ও স্বেচ্ছায় রক্তদানের এই কর্মসূচির আয়োজন করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনে বিএনপির গঠিত চিকিৎসা ও সেবা কমিটি। এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল।

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম প্রমুখ।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্র থাকলে সবাইকে ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। গণতন্ত্র মানলে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেই। তারাই সব। তারাই মালিক। আমরা সব প্রজা। এভাবেই তারা গোটা বাংলাদেশকে দেখে।’

আওয়ামী লীগের এখনকার লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশ লুট করে নেওয়া—এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছোটবেলায় গান শুনতাম “ছেলে ঘুমাল পাড়া জুড়াল বর্গি এল দেশে”। বর্গিদের ভূমিকায় নেমেছে তারা। বর্গিরা যেমন বাংলাদেশের সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত, সেভাবে আজ তারা সমগ্র বাংলাদেশকে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। সেই কানাডার বেগমপাড়া অথবা মালয়েশিয়া, সেই আমেরিকাতে অথবা ইংল্যান্ডে তারা বাড়িঘর তৈরি করছে।’

বিএনপির এই শীর্ষ নেতার ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সারা দেশে ভয় দেখিয়ে, ত্রাস সৃষ্টি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। যেখানে গণতন্ত্র চলতে পারছে না। বিএনপির এতটুকু গন্ধ যাদের আছে, ভিন্নমতের হওয়ায় ভালো ভালো জায়গা থেকে তাদের বদলি করা হয়েছে। অনেকের চাকরি চলে গেছে। অনেকে বাধ্য হয়ে অবসরে চলে গেছেন।

সরকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এই ৫০ বছর পরে শপথ নিতে হবে, এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এদের সরাতে হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকালও বিএনপির আন্দোলন নিয়ে তিনি কটাক্ষ করেছেন। তিনি প্রতিদিন বিএনপিকে নিয়েই কথা বলেন। অন্যদিকে আবার বলেন বিএনপি নেই। বিএনপি না থাকলে প্রতিদিন বিএনপি সম্পর্কে কেন বলেন। এ জন্যই বলেন বিএনপি আছে, খুব ভালো করেই আছে এবং আপনাদের ওপর চড়াও হয়ে বসেছে বলেই বিএনপি সম্পর্কে কথা বলেন।’

নোয়াখালীর বসুরহাটের প্রসঙ্গে টেনে ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনাদের তো লজ্জা হওয়া উচিত। আপনার এলাকা নোয়াখালীর বসুরহাটে কী হচ্ছে। পত্রিকায় এসেছে, সেখানে দুটো খুন হয়েছে—একজন সাংবাদিক ও একজন রাজনৈতিক কর্মী। রাজনৈতিক ওই কর্মীর ভাই মামলা করতে গিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ তাঁর মামলা নেয়নি। কাদের মির্জার বিপক্ষে মামলা নেয়নি। কারণ, তিনি তো কেবল কাদের মির্জা নন, তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর মানুষ ওবায়দুল কাদেরের ভাই। কোথায় আপনার সুবিচার? কোথায় গণতন্ত্র? কোথায় ন্যায়ের শাসন?’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনে বিএনপির গঠিত চিকিৎসা ও সেবা কমিটির আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনে বিএনপির গঠিত চিকিৎসা ও সেবা কমিটির সদস্যসচিব হারুন আল রশিদ।

সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা, ওষুধ বিতরণ ও স্বেচ্ছায় রক্তদানের এই কর্মসূচির পালিত হয়েছে। এতে সহযোগিতা করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন।