‘ধর্মকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দল হতে পারে না’ মর্মে তারেক রহমানের দেওয়া বক্তব্যে অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক ধর্মভিত্তিক পাঁচটি দল। দলগুলো হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি।
এর মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম তারেক রহমানের বক্তব্যের প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছে। দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুল্লাহ ফারুক গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি মাদ্রাসায় জমিয়তের কর্মী প্রশিক্ষণ শিবিরে বলেছেন, ‘একমাত্র ইসলামি রাজনীতিই কল্যাণের নিশ্চয়তা দেয়। যারা এর বিরোধিতা করে, তারা প্রকৃত মুসলমান নয়।’ এ বক্তব্য উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিও পাঠায় দলটি।
অবশ্য এর আগের দিন জমিয়তের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমী এ বিষয়ে প্রথম আলোকে প্রতিক্রিয়া দেন। তিনি বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমান–অধ্যুষিত এ দেশে ইসলাম ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করার কোনো বক্তব্য এ দেশের জনগণ গ্রহণ করবে না।
গত সোমবার লন্ডনে বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখা আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা বক্তৃতা দেন। বক্তৃতার একপর্যায়ে জিয়াউর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে তারেক রহমান বলেন, জিয়া বিশ্বাস করতেন, কোনো রাজনৈতিক আদর্শ ধর্মকে ভিত্তি করে হতে পারে না। এর একটা অবদান থাকতে পারে। কিন্তু ধর্মকে কেন্দ্র করে কখনোই রাজনীতি করা যেতে পারে না। ধর্মের অবদান থাকতে পারে রাজনীতিতে, কিন্তু ধর্মকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দল হতে পারে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর দল ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইসলামের ওপর তারেক রহমানের আরও গভীর পড়াশোনা করা দরকার। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে ইসলামের যে আদর্শ বা মূল্যবোধের চর্চা করে গেছেন, তারেক রহমানের অন্তত সেটুকু লালন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে কারও দ্বারা প্ররোচিত হওয়া উচিত না।’
বিএনপির শরিক অন্য ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতারা জানান, তাঁরা তারেক রহমানের এ বক্তব্য বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা কীভাবে নিচ্ছে, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন।
জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল জামায়াতের দুজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, গণমাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশ হওয়ার পর ওই দিন দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ থেকে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়। তবে দলটি এ বিষয়ে এখনই প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সময় নিতে চাইছেন।
অবশ্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের দায়িত্বশীল আলী আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারেক রহমানের এ বক্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত।’ একই বক্তব্য দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টিও।
জোটের আরেক শরিক খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের মনে করেন, তারেক রহমানের বক্তব্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘উনি (তারেক রহমান) যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন, তাই বলেছেন। আমাদের দল ইসলামভিত্তিক। ধর্মের ভিত্তিতে দল করা যায় বলেই আমরা দল করি।’
তারেক রহমানের বক্তব্য বিএনপির সঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সৃষ্টি করবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে জোটে আছি শুধু একটি কারণে। তা হচ্ছে, বিএনপি ইসলামের জন্য কম ক্ষতিকর, আওয়ামী লীগ বেশি ক্ষতিকর। বিএনপি যে ক্ষমতায় গেলে ইসলাম কায়েম করে ফেলবে, আমরা তা মনে করি না।’
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুসারে তারেক রহমান দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা। তিনি কোন প্রেক্ষাপটে এ কথাগুলো বলেছেন, আমরা জানি না। তবে এটা ঠিক, আধুনিক যুগে বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে আগানো মুশকিল। উনি হয়তো বিষয়টি এভাবে চিন্তা করেছেন। এটাও ঠিক, বিএনপির জোটে বেশ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল আছে। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আমরা একসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করছি।’