দুই নেতার কারণে বিশ্বসংবাদে পরিণত হয়েছে নাসিরনগর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতার কারণে নাসিরনগর বিশ্বসংবাদে পরিণত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌর শহরের জাতীয় বীর আবদুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চে জেলা সম্মিলিত নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শফিকুল আলম ও সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ছায়েদুল হক।
মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের ওই দুই নেতা নাসিরনগর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন দিতে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। আমি আগেও এটা বলেছি। যারা এসব করে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্য রক্ষা করা হবে।’
জেলা নাগরিক সমাজের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তাজ মো. ইয়াছিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমানুল হক। বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা, সংবর্ধিত অতিথি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শফিকুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মো. হেলাল উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা শামছুজ্জোহা চৌধুরী, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলম, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনারা আলম, শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. কাউছার আহমেদ, যুবলীগের সভাপতি শাহনুর আলম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. হারুনুর রশিদ। সংবর্ধিত অতিথির হাতে মানপত্র তুলে দেন নাগরিক সমাজের সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল মিয়া।
আমানুল হক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর কঠোর সমালোচনা করেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আপনারা কীভাবে বলেন শফিকুল আলম আওয়ামী লীগের কেউ না। এ কথা বলার অধিকার আপনারা কোথায় পেলেন?’
মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুষ্ঠুভাবে রাজনীতি করার কোনো পরিবেশ নেই। সর্বত্র পকেট কমিটি দেওয়া হচ্ছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কারা আসে না আসে সেটা দেখে কয়েকটি কমিটি দেওয়া হব বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এসব হাইব্রিড নেতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার বাড়ি এখানে। যাঁরা অন্য জায়গা থেকে এসেছেন তাঁরা যাওয়ার জায়গাও পাবেন না। কোন দিকে যাবেন বুঝতেই পারবেন না। আগামী নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসন থেকে আমি নির্বাচন করব।’
সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা অভিযোগ করেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোনো অনুষ্ঠানে তাঁকে অতিথি করা হয় না। আয়োজকেরা এমনিতেই দাওয়াত দিতে গিয়ে তাদের অক্ষমতার কথা আমাকে বলেন। এসব যারা করে বীর জনতা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারকে নিমন্ত্রণ করা হয়নি।
এদিকে সকালে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গতকাল সকালে শহরে একটি মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা সাংসদের পক্ষে স্লোগান দেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। নাসিরনগর ঘটনার পর এই প্রথম ছায়েদুল হক জেলার কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে শফিকুল আলম জয়লাভ করেন।