দেশে পানিসম্পদমন্ত্রী আছেন কি না, কেউ জানে না: বিএনপি নেতা হাফিজ

জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ সরকারে নেই মন্তব্য করে বিএনপির নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, বর্তমানে দেশে পানিসম্পদমন্ত্রী আছেন কি না, তা ‘কেউ জানে না’।

রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বাংলার সূর্যসন্তান পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্করের অবদান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাফিজ উদ্দিন এ কথা বলেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিনের মতে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের জন্য ‘চীনের আনুকূল্য’ ছাড়া অন্য উপায় নেই।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ঘাড়ের ওপর চেপে বসেছে এই রোহিঙ্গা সমস্যা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে একমাত্র চীনের আনুকূল্য প্রয়োজন। চীনের আনুকূল্য ছাড়া, তার সম্মতি ছাড়া জাতিসংঘ হোক বা অন্য যত বৃহৎ শক্তি হোক, এই রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাব না।’

কয়েক বছর ধরে ভারতের সঙ্গে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির সুরাহা না হওয়ায় অসন্তোষ জানান বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র উজানে একের পর এক বাঁধ নির্মাণ করে, বাংলাদেশের পানি প্রাপ্যতা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে।

আমাদের ২০টি নদী হারিয়ে গেছে ফারাক্কা বাঁধের কারণে। বর্তমানে দেশের পানিসম্পদমন্ত্রী আছেন কি না, তা কেউ জানে না। পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ নেই সরকারের।’

বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক। আর উপমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন শরীয়তপুরের সংসদ সদস্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এ কে এম এনামুল হক শামীম।

বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু তিস্তা নদীর পানি আমরা পাচ্ছি না, তাই তিস্তা নদীর উন্নয়ন পরিকল্পনা দিয়েছে বন্ধুরাষ্ট্র চীন। যদি সরকার এটি গ্রহণ করে, তবে আমাদের উত্তর অঞ্চলের কৃষি-অর্থনীতি পরিবর্তিত হয়ে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের সরকার দোনোমনা। চীনের প্রস্তাবিত তিস্তা প্রজেক্ট গ্রহণ করবে কি না, এর কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য সরকারের কাছ থেকে পাইনি। সরকার এই বিষয়ে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কারও কুক্ষিগত হতে চাই না।’

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের কাছে আজ প্রশ্ন রয়েছে, আমরা কী ধরনের পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করব? আজকে যদি জনগণের সরকার থাকত, তাহলে সর্বদলীয় বৈঠকের মাধ্যমে, বিজ্ঞজনের পরামর্শে, দেশপ্রেমীদের পরামর্শে, পররাষ্ট্রনীতি গৃহীত হতো। আমরা সেটি দেখতে পারছি না। একতরফাভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার জন্য আজকে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি। ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। সে জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা কিয়ামত পর্যন্ত ঋণ শোধ করে যাব। তারপরও এই ঋণ শোধ হবে না। আজকে বাস্তবতার নিরিখে, জাতীয় স্বার্থের নিরিখে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি গৃহীত হতে হবে।’

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘চীন আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। চীন এমন একটি দেশ, যারা অন্য দেশ দখল করে না। নিজের মতামত অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার আগ্রহ তাদের নেই। তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এটি সম্পূর্ণরূপে দক্ষিণ এশিয়ার এবং প্রাচ্যের সাউথইস্ট এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতির সমৃদ্ধির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।’

আলোচনা সভা আয়োজন করে বাংলাদেশ চীন সাংস্কৃতিক একাডেমি। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া। সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাংসদ খায়রুল কবির, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী প্রমুখ।