নির্বাচনের নামে প্রহসনের কী দরকার: সংসদে হারুন

বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ
ফাইল ছবি

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনার রূপকল্প ২০৪১ পর্যন্ত রয়েছে। দরকার কী নির্বাচনের নামে এই ধরনের প্রহসন, হানাহানি, খুনোখুনি, সংঘাতের। দরকার কী?’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে হারুনুর রশীদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে এ প্রশ্ন রাখেন। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ সময় অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় একটি গানের কথা উদ্ধৃত করে হারুন তাঁর বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘কী দেখার কথা, কী দেখছি? কী শোনার কথা কী শুনছি? কী ভাবার কথা, কী ভাবছি? কী বলার কথা, কী বলছি? ৫০ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি।’

হারুনুর রশীদ বলেন, সংবিধানে বলা আছে স্থানীয় প্রতিনিধিরা হবেন নির্বাচিত। চলমান ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত তিন-চার শ চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, তাঁদের কে নির্বাচিত করল? তাঁরা কীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন?

স্পিকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে হারুন বলেন, ‘আমি আপনার কাছে জানতে চাই, আজকে যাঁরা বিনা ভোটে নির্বাচিত, নির্বাচন কমিশন যাঁদের নির্বাচিত ঘোষণা করেছে, তাঁদের আমি কী বলব? অনির্বাচিত, না নির্বাচিত? তাঁরা তো নিশ্চয়ই বিনা ভোটে নির্বাচিত।’ তিনি আরও বলেন, এই কথাগুলো বলতে গেলে সরকারি দলের সদস্যরা তাঁদের বাধা দেন, উপহাস করেন, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন।

অভিযোগ করে হারুন বলেন, তাঁর এলাকায় পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কার্যালয় উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী কাজ করে? তাদের দায়িত্ব কী?

সাংসদ হারুন বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সব সময় গালিগালাজ করা হয়। তাদের ব্যর্থতা নিয়ে কথা হয়। সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা করবে। নির্বাহী বিভাগ সহযোগিতা না করলে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে।

বিএনপির এই সাংসদ বলেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা হয়নি। এক পক্ষের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে অন্য পক্ষ জয়ী হয়েছে। ভবিষ্যতে কী হবে, তিনি জানেন না। সত্যিকার অর্থে জাতি আজ বিরাট সংকটে।

নির্বাচন ক্ষমতা পরিবর্তনের একমাত্র পথ উল্লেখ করে হারুন বলেন, ‘এটি আমরা বিশ্বাস করি। অবশ্যই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সামাজব্যবস্থা নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

বিএনপির অসুস্থ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর অনুমতি দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান হারুন। তিনি বলেন, ‘আমি সংসদ নেতার সাথে বহুবার কথা বলেছি। আমি অনুরোধ করেছি যে দেখেন, ওনার যে শারীরিক অবস্থা, ওনাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিতে অনুমতি দিতে আপনার অসুবিধা কোথায়? আপনি তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগটি দিন। এতে আপনি সম্মানিত হবেন। তাঁর যে বয়স, যে অবস্থা, এ অবস্থায় এটা বিবেচনা করা উচিত।’
হারুন বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। চিন্তা করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন, আইন বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এদের প্রতি জনগণের আস্থা তলানিতে।’

বিএনপির এই সাংসদ আরও বলেন, স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি অবদান বঙ্গবন্ধুর। এটি অস্বীকার করার পথ নেই। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের কোনো দলিলে তিনি (হারুন) এটি দেখেননি। এই সাংসদ আরও বলেন, ‘বেগম মুজিবও লিখেছেন, ২৫ মার্চ পাক-হানাদার বাহিনী গণহত্যা চালায়। সেদিন রাত ১২টায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এটি নিয়ে বিতর্ক করার কোনো প্রয়োজন নেই। বিতর্ক করে মুজিবকে বড় বা ছোট করা যাবে না। ইতিহাসের জায়গায় ইতিহাস থাকবে।’

হারুনুর রশীদ বলেন, ‘দুদিন ধরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংসদে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু জাতীয় সংকটগুলো নিয়ে সংসদ সদস্যরা কথা বলছেন না। ৫০ বছর চলে গেছে, এখনো স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখনো বেহাল। সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি।

সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত করতে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। নিয়োগ, ভর্তি, কেনাকাটায় দুর্নীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। করোনার আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ২০ লাখের বেশি মানুষ ভারতে চিকিৎসার জন্য গেছে। তাহলে আমরা ৫০ বছরে স্বাস্থ্য খাতে কী অর্জন করলাম?’

দেশে এখন লুটপাটের মহোৎসব চলছে অভিযোগ করে হারুন বলেন, ডিজিটাল দুর্নীতি হচ্ছে। ই-কমার্সের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।
হারুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতীয় সংসদ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু বাস্তবে সংসদে সরকারি দল, বিরোধী দল একাকার হয়ে গেছে। সংসদ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না।

এদিকে হারুনের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিএনপির সবাই বলে, আমাদের নেত্রীকে এখনই বিদেশে পাঠাতে হবে। আর ওনার চিকিৎসা করাতে হবে বিদেশে। আমাদের দেশের চিকিৎসা খুব খারাপ। বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া তিন-তিনবার হাসপাতালে গেছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আমরা বলেছি, বিদেশ থেকে যদি ডাক্তার আনতে হয়, আনেন। সেই লাইনে কোনো দিন হাঁটবে না (বিএনপি)। সেই কথা চিন্তাও করবে না। সে বিষয়ে পদক্ষেপও নেবে না। শুধু বলবে, বিদেশ পাঠিয়ে দিতে।’

বিএনপির সাংসদ হারুনকে আরপিও পড়ে দেখার পরামর্শ দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আরপিওতেই বলা আছে, কীভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। আশা করি, আইনটি দেখে হারুন আগামীকাল থেকে আর এ ধরনের বক্তব্য দেবেন না।’