নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের সাহায্য চাওয়া লজ্জার: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের সাহায্য চাওয়ায় সরকারের সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আজকে দুঃখ হয়, লজ্জা হয়, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেন যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য ভারতের কাছে তাদের ধরনা দিতে হয়। কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছি আমরা।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর লেডিস ক্লাবে পেশাজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান করতে ভারতের কাছে আমাদের সাহায্য চাইতে হয়। এটি লজ্জার। অথচ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজন ছিল বিভিন্ন দেশকে এক জায়গায় নিয়ে আসার। সেটা তারা করেনি, করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফল ঘোষণার কথা উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘দেশের অবস্থা কোথায় গিয়েছে। আপনারা দেখেছেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির যে নির্বাচন হয়েছিল, সে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে দেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশনের প্রধানকে রীতিমতো অপমান করা হয়েছিল। সেই দুঃখে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন এবং সে ফলাফল স্থগিত ছিল।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনজীবী সমিতির যে সম্মেলনকক্ষ, সেটা তালাবন্ধ করে রেখে দেওয়া হয়েছিল। গতকাল (বুধবার) আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা, যারা জোর করে রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করে আছে, তারা ঠিক একই সন্ত্রাসী কায়দায় জবরদস্তি সেই তালা ভেঙে ফলাফল ঘোষণা করল। অর্থাৎ আমরা এখনো যেখানে কিছুটা আশা করতাম যে ওই প্রতিষ্ঠানটিতে এখন পর্যন্ত হাত দেওয়া সম্ভব হয়নি, সেখানেও তারা সন্ত্রাসী কায়দায় চলে এসেছে।’

এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করার জন্য পেশাজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আজকে আইনজীবীদের বেরিয়ে আসা উচিত ছিল যে এই ভয়াবহ অন্যায় সহ্য করা উচিত হবে না। আইনজীবীদের উচিত ছিল প্রধান বিচারপতির কাছে যাওয়া এবং সারা দেশে সমস্ত আইনজীবীদের প্রতিবাদ করা। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ফ্যাসিবাদ যখন আক্রমণ করে তখন এভাবেই তারা সমস্ত প্রতিবাদকে রুদ্ধ করে দেয়।’
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে পুলিশের থানা নির্মাণের বিরুদ্ধে শিশুসহ পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের কথা উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।

নিউমার্কেট এলাকার দোকানমালিক-কর্মচারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটাকে ছাত্র সংঘর্ষ বলব না। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দুজন নিরীহকে প্রাণ দিতে হয়েছে। অথচ সেখানে তারা গ্রেপ্তার করল বিএনপি নেতাকে। আমি ধন্যবাদ দিতে চাই গণমাধ্যমকে। তারা তদন্তের মাধ্যমে যে সংবাদ পরিবেশ করেছে, সেখানে নাম–পরিচয়সহ বেরিয়ে এসেছে যে তারা প্রত্যেকেই ছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত ঠিক সেভাবে সরকারি তরফ থেকে আমরা কোনো কথা শুনতে পাইনি।’

এ ঘটনায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ২৪ জনের নাম দিয়ে পুলিশের মামলার উল্লেখ করে সরকারের সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ অবস্থা সারা দেশের। আজকে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, নতুন গণমাধ্যমকর্মী আইন—এসব আইন দিয়ে যেন কেউ কোনো কথা বলতে না পারে, সে ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হচ্ছে। ঠিক একইভাবে খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। আজকে সরকারের নির্দেশ ছাড়া কোনো বিচার হয় না। সরকার যেভাবে বলে সেভাবে বিচার হয়।

এ অবস্থার উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমাদের নেতা (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান) জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান আসছে। যে ভয়াবহ দানব সব তছনছ করে দিয়েছে আমাদের, সেই দানবকে প্রতিরোধ করার জন্য, তাকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।’

ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফরহাদ হালিম, ডা. আবদুল কুদ্দুস, অধ্যাপিকা সাহিদা রফিক, সাবেক সচিব ইসমাইল জবি উল্লাহ, বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান ফখরুল আযম, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাবির সাবেক সহ–উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, সাবেক সচিব আ ন হ আখতার হোসেন, সাবেক আইজিপি এম এ কাইয়ুম, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের আহ্বায়ক প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম, সাংবাদিক নেতা কামাল উদ্দিন সবুজ, রুহুল আমিন গাজী, এম আবদুল্লাহ, আবদুল হাই সিকদার, ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।