পদ ‘ভাগাভাগিতে’ ঝুলে আছে কমিটি

দুই পক্ষ—মহিবুল হাসান চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা শীর্ষ পদ পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের ‘ভাগাভাগিতে’ ঝুলে আছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নগর কমিটি। সম্মেলনের তিন মাসেও কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি কেন্দ্র। দুই পক্ষই কমিটিতে নিজেদের পাল্লা ভারী করার চেষ্টায় তৎপর।

দুটি ধারার একটি সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর এবং অন্য পক্ষটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য প্রায় ৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। বেশির ভাগই এই দুই ধারার।

গত ১৯ জুন চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। সম্মেলনে সপ্তাহখানেকের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। তখন সম্মেলনে আগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদায়ী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কে বি এম শাহজাহান বলেন, ‘চট্টগ্রামে বহু ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগ। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক লীগ কোনো দ্বন্দ্বে ছিল না। এবার আমরা চেয়েছি একটা সম্মেলন করে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে। কমিটি এখনো হয়নি।’

এই নেতা আরও বলেন, চট্টগ্রামের রাজনীতিতে নানা পক্ষ রয়েছে। সবাই চেষ্টা করছে কমিটিতে ঢোকার।

দলীয় সূত্র জানায়, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ দুটি দুই পক্ষকে ভাগ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে একটি প্রাথমিক সমঝোতা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে মহিবুল হাসান চৌধুরীর পক্ষকে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আ জ ম নাছির উদ্দীনের পক্ষের প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছিল। পরে শীর্ষ দুটি পদ এক পক্ষ নিতে চাইলে জটিলতা দেখা দেয়। এ কারণে দেরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাজ ছিল সম্মেলনে সহযোগিতা করা, তা করেছি। কমিটি ঘোষণা কেন্দ্রের বিষয়। এখন তারা জানে কেন দেরি হচ্ছে।’

স্থানীয় রাজনীতির দুই ধারার কথা স্বীকার করে এক প্রশ্নের জবাবে এই সাবেক মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রামের রাজনীতি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় নেতারা জানেন, বোঝেন। এক পক্ষে নয়, সবাইকে সমন্বয় করে যোগ্যতার ভিত্তিতে তাঁরা কমিটি করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। মূল লক্ষ্য থাকবে আওয়ামী লীগকে গতিশীল করা।’

কেন্দ্রীয় কমিটিও এই দুই বলয়ের চাপে রয়েছে। দুই নেতার দুই মেরুতে অবস্থানের কারণে কমিটি গঠনে সময় নিচ্ছেন তাঁরা। এ কারণে চলতি মাসেও কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি কমিটি দেওয়া হবে। এ জন্য একটু সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি।’

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে মহিবুল হাসান চৌধুরী পক্ষে মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল, দেবাশীষ নাথ ও আজিজুর রহমানের নাম আলোচনায় আছে। অন্যদিকে আ জ ম নাছির উদ্দীনের পক্ষে হেলাল উদ্দিন, মো. সালাহউদ্দিন, আবদুল্লাহ আল মামুন, সুজিত দাশ ও আবদুর রশিদ লোকমানের নাম আলোচনায় রয়েছে। এ ছাড়া সহসভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক পদগুলো নিয়েও দুই পক্ষ তদবির চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, ‘অনেকগুলো আবেদন পড়েছে। অনেকে চেষ্টা করছেন, এটা স্বাভাবিক। তবে আমরা যোগ্যতার ভিত্তিতে পদ দেব। আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। বিভিন্ন ধারা থাকবে স্বাভাবিক। তবে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বাসী।’

দলীয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০০১ সালে ২১ সদস্যের নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছিল। এরপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। করোনার কারণে কয়েক দফা পিছিয়ে ১৯ জুন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এখন নেতা-কর্মীদের অপেক্ষা নতুন কমিটি ঘোষণার।