পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েলকে বাদ সরকারের ‘নীতিহীন’ অবস্থান: ফখরুল

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ছবি: প্রথম আলো

পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরায়েল’ শব্দ বাদ দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীরবতাকে সরকারের ‘নীতিহীন অবস্থান’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা যখন মৃত্যুপুরী, সে সময়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েলে ভ্রমণের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার ঘটনা বিশ্ব বিবেককে হতাশ করেছে।

আজ সোমবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন। ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম ও তাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করতেই বিকেলে জরুরি এই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে দেশের জনগণের বদলে এখন সীমান্তের বাইরের ক্ষমতাবানদের তুষ্ট করতে ব্যস্ত। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনবিরোধী এই সিদ্ধান্তে ইসরায়েল সরকারের অভিনন্দন-টুইটের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা এবং এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীরবতায় সরকারের নীতিহীন অবস্থা বেরিয়ে পড়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালে প্রবাসী সরকারের আমল থেকেই বাংলাদেশ স্বাধীনতাপ্রিয় ফিলিস্তিনিদের প্রতি নৈতিক, আত্মিক ও সম্ভাব্য সব ক্ষেত্র নিবিড়ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ গভীর হতাশা, লজ্জা ও ক্ষোভের সঙ্গে বর্তমান অবৈধ, ভোটারবিহীন সরকার ফিলিস্তিনের নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে একটি দায়সারা বিবৃতি প্রদানের মধ্যেই নিজেদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রেখেছে। এমনকি ইসরায়েলি বিমানের মুহুর্মুহু হামলা ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে ফিলিস্তিনের গাজা নগরী যখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে, ঠিক সে সময় বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েল ভ্রমণের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা হতাশ করেছে গোটা বিশ্ব বিবেককে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এর আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে দেশবাসী জেনেছে যে তৃতীয় দেশকে ব্যবহার করে ইসরায়েল থেকে আড়িপাতার যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়েছে, যা প্রতিনিয়ত রাষ্ট্র কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ সংঘটিত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু জাতিসংঘ সরকারের ওই মিথ্যা অজুহাতকে নাকচ করে জবাব চেয়েছে সরকারের কাছে। তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিশ্বের সব মানবাধিকার সংগঠনগুলো যৌথভাবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে এসব নীতিহীন ও অবৈধ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে দেশের জনগণের বদলে এখন সীমান্তের বাইরের ক্ষমতাবানদের তুষ্ট করতে ব্যস্ত।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে ‘সরকারের দায়সারা’ বিবৃতির কথা উল্লেখ করে একজন সাংবাদিক জানতে চান, সরকারের কী করণীয় ছিল? জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বলা তো হয় তিনি নাকি বিশ্বনেতা। তিনি তো উদ্যোগ নিতে পারতেন সব মুসলিম দেশকে আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য, তিনি তো সরকারের পক্ষে অনেক বড় ধরনের সাহায্য পাঠাতে পারতেন ফিলিস্তিনিদের কাছে।’

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ওআইসি, জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন—ন্যামসহ মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার বিভিন্ন উদ্যোগ, পরবর্তী সময়ে দলের চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকার পরিচালনা থেকে শুরু করে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি সেই একই নীতি ও অবস্থান অব্যাহত রাখার বিষয়গুলো তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও মানবতার পক্ষের শক্তি হিসেবে ফিলিস্তিনের নাগরিকদের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিজয়ী হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা সার্বিকভাবে তাদের পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। আমাদের দল ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে যুদ্ধাহতদের জন্য ওষুধ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

আরও পড়ুন