বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা হয়েছিল: আমির হোসেন আমু

বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ১৯৭৯ সালে সুইডেনের স্টকহোমের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছিলেন। তার মধ্য দিয়েই এই দাবি সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়া গিয়েছিল। সেই প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার সম্পন্ন করেছে। দিনটি উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় কথাগুলো বলেছেন বক্তারা। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিচার্স অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

১৯৭৯ সালের ১০ মে বিশ্বমানবতার কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছিলেন তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। সেদিন সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত সর্ব-ইউরোপীয় বাকশালের এক সম্মেলন থেকে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষে প্রথমবারের মতো ঘৃণ্য ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তোলেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।

গতকালের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সর্ব–ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম।

আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা লন্ডনে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দলকে উজ্জীবিত করেছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। জন ম্যাকব্রাইটের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন এবং তাদের দেশে এনে যাতে তদন্ত করা যায় সেই চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকার তাদের ভিসা দেয়নি, আসতে দেওয়া হয়নি।

আমু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস ও অর্জনগুলো নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আবার এই অর্জনগুলো ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করতে সক্ষম হয়েছি, সংবিধানের মূল চার নীতিতে ফিয়ে যাওয়া এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তানি প্রেতাত্মা ও দালালেরা নব্য পাকিস্তান সৃষ্টির যে পাঁয়তারা নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল, সেই জায়গা থেকে জাতিকে তার আসল জায়গায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।’

আমির হোসেন আমু বলেন, এই ১০ মে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের দাবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁরা যেভাবে সূচনা করেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় সেই আন্দোলন দেশে আসে এবং সেই জায়গাগুলো পূরণ হয়েছে। সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে যে অর্জনগুলো এসেছে, তা তাদেরই অকুতোভয় নেতৃত্বের কারণে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে।

অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যখন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন আমরা দেশে শেখ রেহানার পরামর্শে নানা কাজকর্ম করতে সক্ষম হয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই করার জন্য আইনজীবীদের আনাসহ নানা সহযোগিতা তিনি (শেখ রেহানা) করেছেন। শেরি ব্লেয়ারকে তিনি এখানে পাঠিয়েছিলেন। নানাভাবে তিনি সহযোগিতা করেছেন।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে সপরিবার হত্যা করা এই জাতির জীবনে স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে বড় অন্যায়। এই হত্যাকাণ্ডের যদি বিচার না হতো, তাহলে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতো না।

প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ বলেন, ‘শেখ রেহানা দক্ষতার সঙ্গে আমাদের সবাইকে পরিচালিত করছিলেন। লন্ডনে আসার পর থেকেই আমাদের উৎসাহিত করছিলেন। আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। যার ফলে তাঁর নেতৃত্বে আমরা সুইডেনে গিয়েছিলাম এবং সেখানে তিনি এমন একটি মর্মস্পর্শী ও আবেগঘন বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং এমনভাবে আবেদন করেছিলেন, যে আবেদনের ফলে আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে সেই কথাগুলো সারা বিশ্বে জানান দিতে। প্রায় দেড় বছর পরে আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে লন্ডনে নিয়ে আসতে পেরেছিলাম। ওনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের যে রূপরেখা, তা শুরু করতে পেরেছিলাম এবং শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে আজকে আমরা বিশ্বে উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছি।’

গতকালের সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ।