বাম সংগঠনের মিছিলে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ

হামলা
প্রতীকী ছবি

অবিলম্বে সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচার এবং অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবিতে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। বাম সংগঠনগুলোর নেতাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী তাঁদের ওপর হামলা করেছেন। তবে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা বলছেন, মিছিলের কারণে আটকে পড়া কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সকে যেতে দিতে অনুরোধ করায় বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা করেছেন।

আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উল্টো পাশে অবস্থিত ছবির হাটের ফটকের সামনের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে৷ বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দাবি, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হামলায় তাঁদের ১০-১২ জন আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা দাবি করেছেন, বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হামলায় তাঁরা তিনজন আহত হয়েছেন।

সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে ‘প্রগতিশীল ছাক্রসংগঠনসমূহ’–এর ব্যানারে আজ বিকেলে শাহবাগে বামপন্থী আটটি ছাত্রসংগঠনের যৌথ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে তাঁরা চানখাঁরপুলে অবস্থিত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তিদের দেখতে যাচ্ছিলেন। মিছিলটি শাহবাগ থানা অতিক্রম করে ছবির হাটের সামনে আসতেই অ্যাম্বুলেন্সকে যেতে দেওয়া নিয়ে মোটরসাইকেলে থাকা ছাত্রলীগের তিনজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে বাম সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মীর তর্ক বাধে। সেই তর্ক একপর্যায়ে মারামারিতে রূপ নেয়।

ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহবাগে সমাবেশ শেষে আমাদের মিছিল হচ্ছিল। ছবির হাটের ফটকের সামনে মিছিলের পেছনে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। মিছিল এক পাশে সরিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে যাওয়ার জায়গা করে দেওয়া হচ্ছিল। অ্যাম্বুলেন্সগুলোর সঙ্গে তখন একটি মোটরসাইকেলও ঢুকে পড়ে। তখন মোটরসাইকেলটি থামিয়ে তাদের পরে যেতে বলা হয়। মোটরসাইকেলে থাকা ছাত্রলীগের তিনজন নেতা-কর্মী তখন আমাদের নেতা-কর্মীদের মারধর শুরু করেন। মিছিলের সামনে থাকা ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি অনিক রায় তাঁদের নিবৃত্ত করতে গেলে তাঁর মাথায় ইট ও পাথর দিয়ে আঘাত করা হয়। এতে তাঁর মাথা ফেটে গেছে।’

রাগীব নাঈম জানান, অনিক রায়ের মাথায় সাতটি সেলাই পড়েছে। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি আছেন। ছাত্র ইউনিয়নের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্তু রায়ও হামলায় আহত হয়েছেন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক উপসম্পাদক নাজমুল হাসান ওরফে রুপু ও সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী শেখ মাশরুফ হোসেন ওরফে সুজন তাঁদের ওপর হামলা করেছেন।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলার উদ্দেশ্যেই এসেছিলেন বলে দাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাজীব কান্তি রায়ের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হামলায় তাঁদের সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুহাইল আহমেদসহ ১০-১২ জন আহত হয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কর্মী শেখ মাশরুফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাম সংগঠনের মিছিলের পেছনে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স ও ভিআইপি গাড়ি ছিল। পাশে একটি মোটরসাইকেলে আমরা (তিনি, নাজমুল ও তারেক নামের একজন) ছিলাম। দুটি অ্যাম্বুলেন্সে গুরুতর অসুস্থ রোগী ছিলেন। আমরা বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে যেতে দিতে অনুরোধ করি। কিন্তু তাঁরা তাতে রাজি না হয়ে আমাদের সঙ্গে তর্ক করতে থাকেন। একপর্যায়ে বাম সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মী আমাদের ওপর হামলা করেন। তখন আমরা আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছি। পরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল টিমকে বিষয়টি জানিয়েছি।’

হামলায় নাজমুলের মাথা ফেটেছে এবং তিনি নিজেও আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন শেখ মাশরুফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কারও ওপর হামলা করার উদ্দেশ্যে সেখানে যাইনি। চারুকলা অনুষদের ক্যানটিনে খাওয়াদাওয়া শেষে টিএসসিতে যাচ্ছিলাম।’

এ ঘটনার বিষয়ে অবহিত হয়েছেন বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পেয়েছি, কেউ কাউকে হামলা করেনি। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স যাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বহিরাগতরা ছিলেন বলেও খবর পেয়েছি। দুই পক্ষই আমার কাছে অভিযোগ করেছে। দুই পক্ষই পরস্পরকে মেরেছে এবং আহত করেছে।

কোনো পক্ষই হামলার দাবি করেনি। এক পক্ষ বলেছে, তারা অ্যাম্বুলেন্সকে যেতে দিতে বলেছেন। আরেক পক্ষ বলেছে, অ্যাম্বুলেন্সকে পার করে দেওয়ার জন্য তাঁরা সহযোগিতা করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই পক্ষে হাতাহাতি হয়েছে। কী ঘটেছে, কেন ঘটেছে, তা পুলিশকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুলিশের কাছে কেউ অভিযোগ করলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

এর আগে ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি দিলীপ রায়, ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলন) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনয়ন চাকমা প্রমুখ বক্তব্য দেন।