বারবার হামলার শিকার আওয়ামী লীগ সভাপতি

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরদিন ধানমন্ডির সুধা সদনে শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

২০ জুলাই ২০০০। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সমাবেশস্থলের কাছে শক্তিশালী বোমা পুঁতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল জঙ্গিরা। এর আগে এবং পরে বিভিন্ন সময় তাঁর ওপর হামলা ও হত্যার চেষ্টা হয়।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর থেকে বারবার হামলার শিকার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে অন্তত ২২ বার সশস্ত্র হামলা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাঁকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলিবর্ষণ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাঁকেসহ তাঁর গাড়ি ক্রেন দিয়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এর পরের বছর ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে তৎকালীন এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। লালদীঘি ময়দানে ভাষণদানকালে তাঁকে লক্ষ্য করে দুবার গুলিবর্ষণ করা হয়। জনসভা শেষে ফেরার পথে আবারও তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন চলাকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে তাঁর কামরা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দুটি বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ হাসিনা পৌঁছার আগেই বোমাগুলো শনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ওই দিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে এক ডজনের বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোড়া হয়। ভয়াবহ সেই হামলায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ তাঁর দলের ২২ নেতা–কর্মী নিহত হন এবং পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান।

জঙ্গিদেরও আগে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের গড়া দল ফ্রিডম পার্টির একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড হামলা চালায়। ওই হামলাও শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা ছিল। এ অভিযোগে ঢাকার ধানমন্ডি থানায় দুটি মামলা হয় তখন।

উল্লেখযোগ্য হামলা ২৪ জানুয়ারি ১৯৮৮ : চট্টগ্রামে ১১ আগস্ট ১৯৮৯ : ঢাকার ধানমন্ডিতে ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ : পাবনার ঈশ্বরদীতে ২০ জুলাই ২০০০ : গোপালগঞ্জে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০১ : সিলেটে ৩০ আগস্ট ২০০২ : সাতক্ষীরায় ২১ আগস্ট ২০০৪ : ঢাকায়

২০০২ সালে সাতক্ষীরার কলারোয়া এবং ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরের ওপর হামলা হয়।

প্রথম সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শক্তিশালী বোমা পুঁতে রেখে হত্যার চেষ্টা মামলার বিচার শেষ হতে লেগেছে ১৭ বছর। ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ ওই ঘটনায় করা দুই মামলায় রায় দেন। তাতে ১০ জনের ফাঁসির দণ্ড এবং আরও ১৩ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) নেতা-কর্মী।

সর্বশেষ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। মাঝে ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও সিলেটে নির্বাচনী জনসভায় বোমা পেতে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হুজি-বি। কিন্তু হামলার আগেই জনসভাস্থলের অদূরে বোমা বিস্ফোরণে জঙ্গিদের দুই সদস্য নিহত হন। ফলে শেষ পর্যন্ত ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি জঙ্গিগোষ্ঠীটি।

শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে বারবার হামলার চেষ্টা করেছে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি–বি)। হুজি-বির অন্যতম শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নান ২০০৬ সালের ১৯ নভেম্বর এবং ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর দুই দফায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁর জবানবন্দি অনুযায়ী, ২০০০ সালের জুলাই মাসে হুজি-বির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে শেখ হাসিনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। এরপর ওই বছরের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় দুটি শক্তিশালী বোমা পুঁতে রেখে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। হুজি-বির জঙ্গিরা সর্বশেষ হামলা ও হত্যার চেষ্টা চালায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। হুজি–বির নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল। এর মধ্য দিয়ে এ দেশে জঙ্গিবাদের একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্য–বিবৃতিতে বলে আসছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র এখনো বন্ধ হয়নি।