বিএনপির নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টু মারা গেছেন

বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু মারা গেছেন ((ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)। আজ রোববার দুপুরে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছে।
পিন্টুর পরিবার এ মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলছে। তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন পিন্টু পিলখানা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এ ছাড়া একটি অস্ত্র লুটের দায়ে তাঁর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। বিএনপির এই সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত ২০ এপ্রিল পিন্টুকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। হাসপাতালে আসার কয়েক দিন পরে তিনি অসুস্থ বোধ করলে ২৬ এপ্রিল তাঁকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী তাঁর চিকিৎসা চলছিল। এ অবস্থায় দুপুর ১২টার কিছু আগে তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন। কারাগারের চিকিৎসক এস এম সায়েম তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে বলেন। দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে যখন অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছিল, তখন তাঁর জ্ঞান ছিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে পিন্টুকে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন। তার পরও জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কার্ডিওলজি বিভাগে নিয়ে ইসিজি করে মৃত্যু নিশ্চিত হন। তিনি জানান, এর আগে গত ২৬ এপ্রিল তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁর হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও চোখের সমস্যা ছিল।
হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিভাগের প্রধান রইস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পিন্টুর চিকিৎসার ব্যাপারে কারা প্রশাসন থেকে হাসপাতালের পরিচালককে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এতে বলা হয়, নিরাপত্তার কারণে পিন্টুকে কারাগারে রেখেই যেন চিকিৎসক দেওয়া হয়। সেই চিঠি পেয়ে শনিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি কারাগারে যান। কিন্তু জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক তাঁকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেননি। পিন্টুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরবর্তী দিন ছিল ১১ মে। তারিখটা অনেক দেরি হওয়ায় তিনি ওই দিনই পিন্টুকে দেখতে চান। ফিরে এসে বিষয়টি তিনি হাসপাতালের পরিচালককে জানিয়েছেন।
চিঠি দিয়ে চিকিৎসক চাওয়ার পর কেন চিকিৎসককে ফিরিয়ে দিলেন, জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কারা প্রশাসন থেকে ২৩ এপ্রিল একটি চিঠি দিয়ে ২৫ এপ্রিল একজন চিকিৎসকে কারাগারে আসতে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু সময় মতো কেউ না আসায় ২৬ এপ্রিল পিন্টুকে হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। ওই সময় চিকিৎসক তাঁকে ১১ মে আবার আসতে বলেছিলেন। ১১ মে আবার তার দেখানোর কথা থাকায় চিকিৎসককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে পিন্টুর পরিবার এ মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছে। আজ দুপুরে তাঁর হাজারীবাগের বাসায় গেলে তাঁর মা হোসনে আরা, স্ত্রী নাসিমা আক্তার, বোন ফেরদৌসীসহ স্বজনেরা সাংবাদিকদের বলেন, পিন্টুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা এর বিচার চান।
পিন্টুর ভাই নাসিম আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, পিন্টুকে ঢাকায় রেখে চিকিৎসা করানোর জন্য আদালতের নির্দেশ ছিল। কিন্তু রহস্যজনকভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে তাঁকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে রাজশাহীতে পাঠানো হয়। সেখানে পরিকল্পিতভাবে তাঁর চিকিৎসার অবহেলা করা হয়েছে।
পিন্টুর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে হাজারীবাগের বাসায় যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদসহ কিছু নেতা-কর্মী।
এ মৃত্যুকে অস্বাভাবিক দাবি করে রাজশাহী জেলা বিএনপি নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে। আজ সন্ধ্যায় জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদের পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, চিকিৎসার অবহেলার কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
হাবিব উন নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পিন্টু। পরে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পান। ছাত্রদলের সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০০১ সালের নির্বাচনে ঢাকার লালবাগ-কামরাঙ্গীরচর চর আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা ঘটনার অভিযোগে তিনি গ্রেপ্তার হন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও তিনি গ্রেপ্তার হন। ওই সময় (২০০৮) কারাগারে একজন ডেপুটি জেলারকে পিটিয়ে আহত করেন তিনি। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।