মেনন ‘কুৎসা রটনা’ করতে আমার বিরুদ্ধে লিখেছেন: বদরুদ্দীন উমর

বাম রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর ও রাশেদ খান মেনন

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সদ্য প্রকাশিত আত্মজীবনীতে তাঁকে নিয়ে ‘কুৎসা রটনা’ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রবীণ বাম রাজনীতিক ও লেখক বদরুদ্দীন উমর। আত্মজীবনীতে তাঁর সম্পর্কে উল্লিখিত দুটি বিষয়কে ‘গুরুতর’ উল্লেখ করে বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, ‘অন্ধ বিদ্বেষ’ থেকে বানোয়াট এসব অভিযোগ করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।

বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, রাশেদ খান মেনন তাঁর আত্মজীবনী ‘এক জীবন: স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ গ্রন্থে দুটি গুরুতর অভিযোগ করেছেন। এক. বদরুদ্দীন উমর ১৯৬৮-৭০ সময়কালে ‘গণশক্তি’র সম্পাদক থাকাকালে পশ্চিমবঙ্গের ‘দেশব্রতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নকশালদের উদ্যোগে ‘কৃষক বিপ্লবী অঞ্চল’ গড়ে তোলার খবরগুলো কেবল জায়গার নাম পাল্টে বাংলাদেশের নামে চালিয়ে দিতেন। একই অভিযোগ মেনন তাঁর বইয়ে দুবার করেছেন (পৃ. ২৫৮ ও ২৬৪)।

দুই. রাশেদ খান মেনন লিখেছেন, ‘বেশ কিছুদিন “গণশক্তি”তে এ ধরনের সংবাদ ছাপা হয়েছে। পরে বিষয়টা ধরা পড়লে বন্ধ হয়।’ মেননের ভাষ্য, একই কাজ উমর সাহেব মুক্তিযুদ্ধকালেও পার্টির গণবাহিনীর নামে করেছেন। মেনন লিখেছেন, ‘এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করতে, ক্ষতি করতে তাঁর [বদরুদ্দীন উমর] জুড়ি মেলা ভার।’

এর প্রতিবাদ জানিয়ে বদরুদ্দীন উমর বিবৃতিতে বলেন, ‘এ দেশের রাজনীতিতে বামপন্থী নামে পরিচিত কমিউনিস্ট আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী রাশেদ খান মেনন তাঁর সদ্য প্রকাশিত আত্মজীবনীতে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করতে নিযুক্ত হয়ে লিখেছেন যে ১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ সালে “গণশক্তি” পত্রিকায় তৎকালে চলমান ভারতের নকশালবাড়ী আন্দোলনের যে রিপোর্টগুলো সেখানকার “দেশব্রতী” পত্রিকায় প্রকাশিত হতো, সেগুলোতে জায়গার নাম পাল্টে আমি পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা বলে চালিয়ে দিতাম। এটা কীভাবে সম্ভব বোঝা মুশকিল।’

বদরুদ্দীন উমর বলেন, “‘দেশব্রতী”তে প্রধানত থাকত সেখানকার বিভিন্ন এলাকায় বাঘা বাঘা জোতদারদের গলা কেটে তাঁদের হত্যার রিপোর্ট। তৎকালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রকাশ্য কোনো পত্রিকায় কি সে ধরনের কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করা সম্ভব ছিল? অন্ধ বিদ্বেষ ও মতলববাজি মানুষকে কীভাবে কাণ্ডজ্ঞানহীন করতে পারে, এ হলো তারই দৃষ্টান্ত। আমি “গণশক্তি”র সম্পাদক ছিলাম। কিন্তু এর জন্য পার্টিনিয়ন্ত্রিত সম্পাদকমণ্ডলী ছিল। পার্টির অনুমোদনের বাইরে কোনো কিছুই “গণশক্তি”তে ছাপা হতো না।’

বিবৃতিতে বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ১৯৬৮-৬৯ সালে “গণশক্তি” নামে কোনো পত্রিকা ছিল না। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) অঘোষিত মুখপত্র হিসেবে “সাপ্তাহিক গণশক্তি” প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এটি বন্ধ হয়েছিল ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। কাজেই ১৯৬৮-৬৯ সালে “গণশক্তি”র কথা বলা এক মহা মিথ্যা ছাড়া আর কী? এ ছাড়া আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলাম ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।’

বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘১৯৬০–এর দশক থেকে আজ পর্যন্ত আমি এ দেশে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে যে কাজ করেছি, সেটা এখানকার জনগণের কাছে সুবিদিত। কাজেই আমি এখানে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। পাঁচ খণ্ডে লিখিত আমার আত্মজীবনী “আমার জীবন”–এ (প্রকাশক বাঙ্গালা গবেষণা) আমি আমার জীবনের কর্মবৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করেছি।’

রাশেদ খান মেননের লেখার প্রতিক্রিয়ায় বদরুদ্দীন উমর বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি এরশাদের শাসন আমলে সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের এজেন্ট হিসেবে এরশাদের অফিস থেকে নিয়মিত টাকা নিয়েছি, আওয়ামী লীগের নানা সমালোচনা করেও তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছি, কোনো বিখ্যাত সরকারি কলেজের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থেকে ছাত্র ভর্তির সময় লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছি, আওয়ামী লীগের মাস্তানদের দ্বারা পরিচালিত জুয়াড়ি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শত শত কোটি টাকা লোপাট করেছি—এ ধরনের কোনো অভিযোগ করতে অপারগ হয়ে আমার বিরুদ্ধে উপরিউক্ত অভিযোগ ছাড়া মেনন অন্য কোনো কথা খুঁজে পাননি। বেচারা মেনন!’

বদরুদ্দীন উমরের এই বিবৃতির বিষয়ে রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের জন্য চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থানরত মেননের মুঠোফোনে ফোন করে ও মেসেজ পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।