শ্রীপুর পৌর নির্বাচনে আ.লীগের দুর্গে ‘দুর্বল’ প্রতিযোগী বিএনপি

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় লোগো

দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচনে ভোটের হিসাব-নিকাশ হয় প্রায় সংসদ নির্বাচনের মতোই। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর নির্বাচনেও ভোটের হিসাব-নিকাশ তেমনটাই হবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে শ্রীপুর পৌরসভায় কিছুটা দুর্বল প্রতিযোগী বিএনপি—এমনটা ভাবছেন সাধারণ মানুষ।

শ্রীপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে টানা তিনবারের মতো মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন আনিছুর রহমান। একই সঙ্গে তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিগত নির্বাচনগুলোয় তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ১০ হাজার ২১৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। সে সময় তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শহিদুল্লাহ শহিদ। তিনি ভোট পেয়েছিলেন ১৬ হাজার ১২১টি। এই পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ৬৭ হাজার ৯৩৫। সর্বশেষ নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টিতেই আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছিলেন। দুটিতে জয় পেয়েছিলেন বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী।

এবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন পৌর বিএনপির সভাপতি কাজী খান। তিনি প্রথমবারের মতো পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হলেন। ছাত্ররাজনীতি থেকে তাঁর উত্থান। শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজে একসময় নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিলেন তিনি। বিগত পৌরসভা নির্বাচনগুলোয় শ্রীপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য প্রয়াত বিএনপি–মনোনীত প্রার্থী শহিদুল্লাহ শহিদের নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন শাহ আলম নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তবে তিনি সদ্য প্রয়াত বিএনপির মেয়র প্রার্থী শহিদুল্লাহ শহিদের ভাই। কোনো পদে না থাকলেও বিএনপি পরিবারের নির্ভরযোগ্য সদস্য হওয়ায় দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর জানাশোনা আছে বলে জানিয়েছেন তাঁর সমর্থকেরা। তাঁর ছোট ভাই মোস্তফা কামাল গতকাল সোমবার বিকেলে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী তাঁর বড় ভাইয়ের সঙ্গে আছেন। তিনি বলেন, ‘সব দলেই বিভক্তি থাকে। বিএনপিতেও আছে। সিংহভাগ বিএনপির নেতা-কর্মী ভাইয়ের সঙ্গে রাখছেন, তাঁর হয়ে কাজ করছেন। আমরা আশা করি, বিপুল ভোটে নির্বাচনে বিজয়ী হব। কারণ, বিভক্তি থাকায় বিএনপির একটা বড় অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শাহ আলমকে ভোট দেবেন।’

কিন্তু উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ফকির প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘বিএনপিতে কোনো বিভক্তি নেই। বরং সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি–মনোনীত প্রার্থী কাজী খানের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন।’ তিনি বলেন, ইভিএম ভালো পদ্ধতি না। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সুষ্ঠু হবে না জেনেও নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার কারণ কী—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারপরও আমরা প্রার্থী দিলাম, দেখি তাঁরা শেষ পর্যন্ত কত দূর কী করেন।’

এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষ বলছেন, শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর শক্তিশালী অবস্থানের সামনে অসম প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিএনপি। প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও বিএনপির উপজেলা পর্যায়ে কমিটিগুলোয় দলীয় বিভক্তি আছে। বিএনপি থেকে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ আলমকে সাধারণ মানুষ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবেই মনে করছেন। যদিও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী না, দলে তাঁর কোনো পদ নেই; তবু এ ক্ষেত্রে পৌরসভায় বিএনপির ভোট অসম ভাগাভাগির আশঙ্কা আছে।

শ্রীপুর পৌরসভা এলাকার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ির বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আনিছুর রহমান বিপুল ভোটে তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। তা ছাড়া তিনি মানুষের সঙ্গে খুব সহজেই মিশতে পারেন। এ জন্য তাঁর একটা ‘একচেটিয়া’ জনপ্রিয়তা আছে। সদ্য প্রয়াত বিএনপির প্রার্থী শহিদুল্লাহ শহিদেরও ভালো জনপ্রিয়তা ছিল। এখন তাঁর ভাই মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির ভোট ভাগাভাগি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

একই এলাকার খোরশেদ আলম বলেন, দলীয় বিভক্তি দুই দলেই আছে। তবে শ্রীপুর দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত। এখানে নির্বাচনটি খুব বেশি প্রতিযোগিতামূলক হবে বলে মনে হয় না।

পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ‘শ্রীপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির ভোটারও আছেন যথেষ্ট। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে লড়ছে দুর্বল বিএনপি। রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অবশ্য বড় একটা কারণ। বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠে সক্রিয় হতে পারছেন না।’

নির্বাচন নিয়ে নিজের ভাবনা জানতে বিএনপির প্রার্থী কাজী খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন কথা বলতে পারছি না, দুঃখিত।’

শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি আওয়ামী লীগের এলাকা। আমাদের প্রার্থী তুমুল জনপ্রিয়। বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন তিনি।’

শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ জানুয়ারি শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৭ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এটি চতুর্থবারের মতো নির্বাচন। গত ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপির প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে তা স্থগিত হয়। পরে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নতুন তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।