সরকার ইসরায়েল থেকে নজরদারির যন্ত্র এনেছে: ফখরুল

রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির এক সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

সরকার আড়িপাতার যন্ত্র ইসরায়েল থেকে নিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর দাবি, এই সরকার নিজেদের রক্ষা করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে। এমনকি মোবাইল, ফেসবুকও সরকার মনিটর (নজরদারি) করছে। এ জন্য সরকার ইসরায়েল থেকে যন্ত্র (আড়িপাতার) নিয়ে এসেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘এই যে আপনারা মোবাইলে কথা বলেন, ফেসবুক খোলেন—এগুলো ওরা নিয়ন্ত্রণ করে, মনিটর করে। তারা যন্ত্র নিয়ে এসেছে ইসরায়েল থেকে। যে দেশের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যেটা আবার আল-জাজিরা টেলিভিশন প্রচার করেছে। আমরা বিস্ময়ে লক্ষ করলাম, আমাদের সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।’

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন। সারা দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে এই সমাবেশ হয়।

বিএনপির মহাসচিব স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো হরণ করার জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কথা বলতে পারি না। আমার লেখার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দিচ্ছে। লিখলে জেলে দিচ্ছে, জেল থেকে জামিন পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে অন্যান্য দেশ বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশের কাছে আমার ন্যায্য হিস্যাও চাইতে পারব না।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের ঢাকা সফরকালে সীমান্ত হত্যা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার প্রতিবাদ জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা নিয়ে এই সরকারের এত দুর্বলতা কেন? কেন ওরা কানেকটিভি চায়? আমরা চাই যে কানেকটিভি হোক। বাণিজ্য বাড়ুক, প্রসার ঘটুক। কিন্তু আমি কিছুই পাব না। আমি পোর্ট দিয়ে দেব, আমার এয়ারপোর্ট ব্যবহার করতে দেব, আমার রাস্তা ব্যবহার করতে দেব, কিন্তু বিনিময়ে তিস্তা নদীর পানিরও হিস্যাও পাব না, এটা হতে পারে না। সেখানে আমরা স্বাধীন কোথায়?’

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) তো আজ্ঞাবহ ক্রীতদাসের চেয়েও খারাপ। সরকারকে কিছু বলতে হয় না, তার আগে বলে দেয়, খুব ভালো নির্বাচন হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এই যে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সব জয়লাভ করেছে। এই জনসভা থেকে ঘোষণা করতে চাই, অবিলম্বে এই নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে। নতুন করে যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই সরকারের দুরভিসন্ধির কোনো সীমা নেই। এই অবৈধ নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নৈশভোজের নির্বাচনের যে বৈধতা দিয়েছে, সেই বৈধতা দেওয়ার ফলে আজকে আওয়ামী একটা ভূত আমাদের ওপর চেপে বসেছে। আওয়ামী লীগের বিচার হওয়ার আগে এই নির্বাচন কমিশনারের বিচার হবে।’

দেশব্যাপী নিরপেক্ষ নির্বাচন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে বুধবার রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

সভাপতির বক্তব্যে উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী তাবিখ আউয়াল বলেন, ‘আমরা ঢাকাসহ সারা দেশে ভোটের নামে নিয়মিত তামাশা দেখছি। নিয়মিত আমাদের ভোট চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে, আগের রাতে ভোটের বাক্স ভরিয়ে রেখে তারপর ইভিএমের মাধ্যমে ভোট ছিনিয়ে নেয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ঘটাতে হলে আর নিশ্চুপ না থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে।’

বেলা দুটায় সমাবেশ শুরুর আগেই খিলগাঁও তালতলা সুপার মার্কেটের সামনের সড়ক লোকে লোকারণ্যে হয়ে পড়ে। এই সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল মোহাম্মদপুরের শহীদ পার্কে। রাতে পুলিশ আপত্তি জানালে সমাবেশের স্থল পরিবর্তন করে খিলগাঁওয়ে আনা হয়। সমাবেশে নেতা-কর্মীদের ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ এবং ‘ভোট ভোট চোর’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।

তাবিথ আউয়ালের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির, হাবিব-উন-নবী খান, বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বরিশালের মজিবর রহমান সরোয়ার, খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জু, চট্টগ্রামের শাহাদাত হোসেন, রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন প্রমুখ।