সরকার পরিবর্তন হলেই গুণাবলির পরিবর্তন হয় না: জাফরুল্লাহ চৌধুরী

আজ শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণ অধিকার পরিষদ আয়োজিত ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা
ছবি: প্রথম আলো

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের পরিবর্তন হলেই গুণাবলির পরিবর্তন হয় না। খালেদা জিয়া সরকার যা করে গেছে, শেখ হাসিনা সরকার তা বহাল রেখেছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং শান্তিরক্ষা মিশনে র‌্যাবকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবির প্রেক্ষাপটে জাফরুল্লাহ চৌধুরী  এসব কথা বলেন।

আজ শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণ অধিকার পরিষদ আয়োজিত ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগের জায়গায় বিএনপি এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে না। মনে রাখা উচিত, বিএনপির দুটি ভুল হচ্ছে, তারা অপারেশন ক্লিনহার্ট তৈরি করেছিল এবং ওষুধের দাম বাড়িয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞায় খুব বেশি খুশি হওয়ার জায়গা নেই উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশবাসীকে জানাতে হবে, এত দিন আমরাই বলেছি। এখন বিদেশেও এগুলো আলোচনা হচ্ছে। এখন থেকে সাবধান হতে হবে।’

বিএনপিকে সব রাজনৈতিক দলের অফিসে গিয়ে কথা বলার আহ্বান জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ ছাড়া তাদের রাস্তায় থাকতে বলেন। তিনি বলেন, সবার মতামত নিয়ে কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। পুরোনো মদকে নতুন বোতলে ভরলে লাভ হবে না।

আগামী নির্বাচন আগের দুই নির্বাচনকেও ছাড়িয়ে যাবে উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে প্রধান শিক্ষকদের ব্যবহার করা হবে এবং জেলা প্রশাসকেরা তো অনুগত আছেই। এসব ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। তিনি জানান, তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না। অন্তত দুই বছরের জন্য একটা জাতীয় সরকার দরকার। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানান। এ ছাড়া বলেন, আমলা দিয়ে সুশাসন কায়েম হয় না।
সভাপতির বক্তব্যে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। গত ১২ বছরেও বিরোধী দল কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জন্য সরকার দায়ী। তারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজে জড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বাংলাদেশের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব রপ্তানি, শুল্ক সুবিধার ক্ষেত্রেও পড়তে পারে। এসব ঘটলে দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।

গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর সরকার ইয়ার্কিমূলক কথাবার্তা বলেছে। লবিস্ট নিয়োগ করে এসব করা হয়েছে বলে প্রচার করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগই ২০০৪ সালে বাংলাদেশের পক্ষে লবিস্ট নিয়োগ করে। কিন্তু তারা দায় দিচ্ছে বিএনপির ওপর। বিএনপি দলের টাকা ব্যয় করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের করের টাকা ব্যয় করে লবিস্ট নিয়োগ করছে। তিনি আরও বলেন, ‘নিজেদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে তাদের মিথ্যার বিরুদ্ধে আমাদের সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে পারছি না।’

নুরুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জনগণকে দেয়নি, সরকারকে দিয়েছে সঠিক পথে আসার জন্য। তারা তাদের কাজ করেছে। কিন্তু জনগণ বা রাজনৈতিক দল রাস্তায় দাঁড়িয়েছে? তা কিন্তু হচ্ছে না। র‌্যাব বিলুপ্ত করা বা নাম পরিবর্তন করার আহ্বান জানান তিনি।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন নৈতিক সমাজের সাবেক মেজর জেনারেল আ ম স আ আমিন, রাষ্ট্রচিন্তার সমন্বয়ক দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সম্পাদক জাহেদ উর রহমান, গুম হওয়া কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী নাসরিন জাহান প্রমুখ।