সাড়ে চার মাস উত্তেজনার পর দুই ভাইয়ের সাক্ষাৎ

ওবায়দুল কাদের, আবদুল কাদের মির্জা

প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে নাটকীয় ঘটনা, উত্তেজনা, সংঘাত ও দুজনের প্রাণহানির পর দুই ভাইয়ের সাক্ষাৎ ঘটল। আলোচিত দুই ভাইয়ের একজন হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অন্যজন নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।

গতকাল শনিবার বিকেলে ধানমন্ডিতে ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে দুই ভাইয়ের সাক্ষাৎ হয়। এ সময় মির্জা কাদের ফুলের তোড়া দেন ওবায়দুল কাদেরকে। সেই ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট দেন কাদের মির্জা।

কাদের মির্জা তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘আমার পিতৃতুল্য সহোদর বড় ভাই, বাংলাদেশের মেধাবী রাজনীতির প্রতীক, যিনি তৃণমূল থেকে নিজ মেধা ও শ্রমে এশিয়ার অন্যতম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকে পদস্থিত হয়েছেন। বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদের অন্যতম সফল মন্ত্রী হয়েছেন। আমরা সর্বদা রাজনীতি করেছি জনগণ ও জনকল্যাণের জন্য। মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বিশ্বাস করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইনশা আল্লাহ জীবনের শেষনিশ্বাস পর্যন্ত জনগণের জন্য নিজেদের নিয়োজিত রাখব।’ তিনি লেখেন, ‘মানুষের মান–অভিমানের মধ্যে মানবজীবন রচিত হয়। আপনজনের প্রতি সাময়িক অভিমান হলেও তা কখনো স্থায়ী হতে পারে না। সকল গ্লানি ভুলে শান্তির কোম্পানীগঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পতাকাতলে একত্রিত হতে আহ্বান জানাচ্ছি।’

তবে কাদের মির্জার এই পোস্টে মন গলেনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের। এই বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের ওনার ভাইয়ের সঙ্গে মিলতে পারেন। আমরা তাঁর (কাদের মির্জা) সঙ্গে মিলার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা সবাই কাদের মির্জার সঙ্গে ভবিষ্যতে আর রাজনীতি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওই সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে।’

ওবায়দুল কাদের ও আবদুল কাদের মির্জার মধ্যে দ্বন্দ্বে বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরের পক্ষ নিয়েছিলেন খিজির হায়াত খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ দলের একটা অংশ। মিজানুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বড় ভাই সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে কাদের মির্জার সাক্ষাৎ নিয়ে তাঁরা চিন্তিত নন। তাঁরা তাঁদের রাজনীতি করছেন, মন্ত্রীও তাঁদের সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।

গত বছরের ৩১ মার্চ পৌরসভার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে জাতীয় নির্বাচন, নোয়াখালী ও ফেনীর দুই সাংসদের অপরাজনীতি, টেন্ডার, চাকরি বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে বক্তব্য রেখে আলোচনায় আসেন আবদুল কাদের মির্জা। তিনি একপর্যায়ে ভাই ওবায়দুল কাদের ও ভাবি ইশরাতুন্নেসা কাদেরের বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দেন। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দলের বেশির ভাগ নেতা কাদের মির্জার সঙ্গ ত্যাগ করেন।

দল এবং দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কাদের মির্জার ‘মিথ্যাচার’–এর প্রতিবাদে ১৯ ফেব্রুয়ারি মিজানুর রহমানের অনুসারীরা উপজেলার চাপরাশিরহাটে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। ওই মিছিলে হামলা চালান কাদের মির্জার অনুসারীরা। এতে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান স্থানীয় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন।

এরপর ৮ মার্চ কাদের মির্জার অনুসারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে লাঞ্ছিত করে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ডাকা প্রতিবাদ সমাবেশে হামলা চালায় কাদের মির্জার অনুসারীরা। এর জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন একজন। এভাবে সংঘাত, উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলতে থাকে ঈদুল ফিতরের আগপর্যন্ত।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, ঈদের আগে ওবায়দুল কাদেরের পক্ষ থেকে মির্জা কাদেরের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ তৈরি করা হয়। ভাই হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দেন ওবায়দুল কাদের। মির্জা কাদেরও সুর নরম করেন এবং বিষয়টি আর না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্যে গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা কাদের।