হঠাৎ করে একজন ‘নেই’, এটা কখনো দেখিনি: মির্জা ফখরুল

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে
ছবি: সংগৃহীত

গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের এক অনুষ্ঠানে এসে কাঁদলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এই গুম হওয়ার সঙ্গে আমরা পরিচিত ছিলাম না। বাংলাদেশে এত আন্দোলন হয়েছে, সংগ্রাম হয়েছে, খুন হয়েছে, কিন্তু হঠাৎ করে একজন নেই—এটা কখনো দেখিনি। বিগত এক দশক ধরে এটি ঘটছে।’

আজ শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল নামের একটি সংগঠন এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

রাজধানীর দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া সাফা নামের এক অশ্রুসজল শিশুর ছবির কথা উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। বলেন, ‘সাফার ছবিটা সারা ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়েছে, ছবিটার দিকে তাকালে কোনো হৃদয়বান মানুষের স্থির থাকা সম্ভব নয়। শুধু দেশে নয়, এই ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে।’

সাফার ছবিটা দৃক আয়োজিত বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্ট-২০২১ এ প্রথম হয়। সাফার বাবা ছাত্রদল নেতা মাহফুজুর রহমান (সোহেল) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হয়েছেন বলে পরিবারের অভিযোগ।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গুম হওয়ার সঙ্গে আমরা পরিচিত ছিলাম না। এটা লাতিন আমেরিকায় ঘটত; কিছুটা নর্থ কোরিয়াতে ঘটত। বাংলাদেশে এত আন্দোলন হয়েছে, সংগ্রাম হয়েছে, খুন হয়েছে, কিন্তু হঠাৎ করে ‘‘নেই’’, তুলে নিয়ে গেল সাদাপোশাকধারী লোকেরা। তারপর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যায় না। এটা আমরা কখনো দেখিনি। ইলিয়াস আলীর (বিএনপি নেতা) ঘটনাটা আমাদের কাছে নতুন ছিল। চৌধুরী আলমসহ পরবর্তী ঘটনাগুলো ঠিক একইভাবে ঘটেছে।’

এ সময় আবেগতাড়িত কণ্ঠে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে (গুমের শিকার ব্যক্তিদের) পরিবারগুলোর দিকে তাকালে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। কেন এ শিশুরা এই যন্ত্রণা পাচ্ছে। তারা শুধু মানসিক নয়, আর্থিক দিক দিয়েও অত্যন্ত কষ্টে আছে।’

গুমের ঘটনায় র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কথায় আছে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। আমরা গুম নিয়ে যখন কথা বলেছি, তখন নানা ধরনের বিদ্রূপ করেছে। আজ প্রমাণ হয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে, এত দিন যে কথাগুলো বলে এসেছি। এই শিশুদের কান্না বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে গেছে। যে কারণে নিষেধাজ্ঞায় পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়েছে, গুম করা ও বিনা বিচারে হত্যার কারণে র‍্যাব এবং (এ বাহিনীর) কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।’

এটা ছোটখাটো ব্যাপার নয়; বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্‌যাপন করছে, তখন এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা গোটা জাতির ওপর কলঙ্ক লেপন করেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। এ জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বেআইনিভাবে, জোর করে চরম জঘন্য ও অমানবিক এই কাজগুলো করছে।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা সে জন্যই বলছি, আসলে গণতন্ত্র যখন থাকে না, তখন সবকিছু অসার হয়ে যায়। তখন এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে।

তাই আমাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে; তার একমাত্র কারণ তিনি বাইরে থাকলে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না।’ একই কারণে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অন্ধকার কেটে যাবে। মানুষ জেগে উঠছে, জেগে উঠবে ইনশা আল্লাহ এবং যে ভয়াবহ পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে, এর জন্য দায়ী প্রত্যেককে চিহ্নিত করা হবে; তাঁদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’

তানভীর আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির।