৮ বছর আগে ‘সরকার উৎখাতে’ উসকানি, এত দিন আজিজুলকে ‘খুঁজে পাচ্ছিল না’ পুলিশ

আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
সংগৃহীত

আট বছর আগে করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলাটি করেছিল। ওই মামলার ১৫৭ নম্বর আসামি ছিলেন তিনি। আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে পুলিশ বলেছে, ৫ মে সমাবেশ চলাকালে আজিজুল হক ইসলামাবাদী সরকার উৎখাত করার জন্য বিভিন্ন রকম উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন।
মামলায় আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে গ্রেপ্তারের পর সাত দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রোববার দিবাগত রাত দুইটায় গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার যৌথ অভিযানে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বালুচর থেকে আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে আদালতে উপস্থাপন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের জন্য রিমান্ড চাইলে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

২০১৩ সালে শাপলা চত্ত্বরে সহিংসতা ও নাশকতা চালায় হেফাজতে ইসলাম।
প্রথম আলো ফাইল ছবি

আট বছর আগের ঘটনা। এত দিন পর গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে আতিকুল ইসলাম বলেন, আজিজুল হককে গ্রেপ্তারের সব চেষ্টাই চলছিল। কিন্তু পুলিশ তাঁকে খুঁজে পাচ্ছিল না। এখন তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করেছে।
আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে মতিঝিল অঞ্চলের পুলিশ পরিদর্শক কামরুল হাসান তালুকদার বলেছেন, আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ এজাহারভুক্ত অন্য আসামীরা বাংলাদেশের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশের সরকারকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উৎখাতের জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদে ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির নামে লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র , আগ্নেয়াস্ত্র, লোহার রড, পাথর, বোমাসহ মতিঝিল, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা মোড়, পল্টন, ইত্তেফাক মোড়, গোপীবাগ, কমলাপুর, আরামবাগসহ আশপাশের স্থানে অবস্থান নেয়। ওই দিন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ তাদের সহযোগী কয়েকটি ইসলামি সংগঠন ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে। সমাবেশ চলাকালে আজিজুল হক ইসলামাবাদী সরকার উৎখাত করার জন্য বিভিন্ন রকম উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। একপর্যায়ে আসামিরা বেআইনিভাবে যানবাহন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করেন এবং বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকেন। কর্তব্যরত পুলিশের ওপর আক্রমণ করে গুরুতর আহত করেন এবং সরকারি কাজে বাধা দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সমাবেশ চলাকালে বেলা আনুমানিক চারটায় ৬ নম্বর পুরানা পল্টন এলাকায় উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-পূর্ব) অফিসের সামনে অতর্কিতভাবে হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কয়েক হাজার নেতা–কর্মী বাঁশ ও কাঠের লাঠিসোঁটা, লোহার রড ও অবৈধ অস্ত্র দেখিয়ে সরকারবিরোধী মিছিল করেন। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে প্রথমে গুলি ছোড়েন এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটান। চার-পাঁচ জায়গায় ট্রাফিক কার্যালয়ের নিচতলা ও দোতলার কক্ষগুলোতে থাকা বিভিন্ন অফিস সরঞ্জাম ও মালামাল এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত ১৩টি সরকারি গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেন। বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের সরকারকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উৎখাত করার জন্য আজিজুল হকসহ ১৮ দলীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদ আছে বলে প্রতীয়মান হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের পর আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে বিধি মোতাবেক মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে গতকাল হাটহাজারীতে বৈঠক শেষে আজিজুল হককে আটক করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী। হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারী ও সহকারী প্রচার সম্পাদক এনামুল হাসান ফারুকী বলেছেন, গতকাল সভা শেষে তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন গাড়ির অপেক্ষায়। সেখানেই তাঁকে সর্বশেষ দেখা গেছে। এরপর আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।