
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নয়জন প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই ‘স্বশিক্ষিত’। তাঁরা হলেন বিএনপির প্রার্থী ও সদ্যবিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং সিপিবি-বাসদের প্রার্থী মো. আবু জাফর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী জসিম উদ্দিন। বাকি ছয়জনের মধ্যে দুজন প্রার্থী স্নাতক পাস।
কখনো একটিও ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়নি—এমন প্রার্থী যেমন রয়েছেন, তেমনি ৩৪টি মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন, এমন একজনও আছেন। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
হলফনামা অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মোট চারটি ফৌজদারি মামলা হয়েছিল। দুটি দুর্নীতির মামলা, একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং অপরটি জরুরি ক্ষমতা বিধিমালার মামলা। প্রতিটি মামলা থেকেই তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অব্যাহতি পেয়েছেন।
বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে সাতটি ফৌজদারি মামলা চলমান রয়েছে। এর বাইরে দুটি মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি এবং খালাস পেয়েছেন।
বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. বদরুজ্জামান সেলিম স্নাতক পাস। তাঁর বিরুদ্ধে ছয়টি ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন। এর বাইরে তিনটি ফৌজদারি মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। প্রতিটি মামলাই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের হওয়া।
সিপিবি-বাসদের প্রার্থী মো. আবু জাফরের শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বশিক্ষিত’। তাঁর বিরুদ্ধে কখনো কোনো ফৌজদারি মামলা হয়নি। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কাজী জসিম উদ্দিনও শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বশিক্ষিত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও কোনো ফৌজদারি মামলা নেই।

ইসলামী আন্দোলনের (চরমোনাই পীর) কেন্দ্রীয় সদস্য মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান ডিএফএম (ডিপ্লোমা ইন ফরেনসিক মেডিসিন) পাস করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. এহছানুল হক দাখিল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও কোনো মামলা নেই। উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করা আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মুক্তাদির হোসেন তাপাদারের বিরুদ্ধেও কোনো মামলা নেই।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এলএলবি পাস। তাঁর বিরুদ্ধে ৩৪টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এসব মামলার প্রতিটিই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা এবং প্রতিটি মামলার বাদী পুলিশ।
যোগাযোগ করলে এহসানুল মাহবুব দাবি করেন, সবই মিথ্যা মামলা। গতকাল সোমবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দমন-পীড়ন নীতির অংশ হিসেবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে ৩৪টি মামলা করেছে পুলিশ। এগুলো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যেগুলোর কোনো ভিত্তিই নেই। সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কেবল হয়রানির উদ্দেশ্যেই আমার বিরুদ্ধে এত সব মামলা করেছে।’
এদিকে মেয়র প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার দৈন্যদশা নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি, জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য যেকোনো পর্যায়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন।’