খালেদা জিয়ার আপসহীন ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াফাইল ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। পৃথক শোকবার্তা, বিবৃতি ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আজ মঙ্গলবার তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়েছে। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় ইন্তেকাল করেন খালেদা জিয়া। তাঁর জানাজা আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাঁকে তাঁর স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হবে।

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবার ও দলের নেতা–কর্মীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এক দুঃসময়ে দলের হাল ধরেন এবং তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ ও জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, তিন জোটের রূপরেখা প্রণয়ন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তাঁর (খালেদা জিয়া) আপসহীন নেতৃত্ব জাতি আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তাঁর মৃত্যুতে আমরা একজন দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক অভিভাবককে হারালাম। দেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তিনি এক অনন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান ও প্রধান নির্বাহী বদিউল আলম মজুমদার এক শোকবার্তায় বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিস্তার, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই এবং জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে খালেদা জিয়ার আপসহীন ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই সন্ধিক্ষণে তাঁর প্রয়াণ জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এক শোকবার্তায় বলেছেন, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে চব্বিশের অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরকালে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। খালেদা জিয়ার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই, কল্যাণধর্মী মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইকে সামনে এগিয়ে নিতে সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন এক শোকবার্তায় বলেছেন, খালেদা জিয়া তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায়বিচারের পক্ষে অবিচল থেকেছেন। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তাঁর অনমনীয় ব্যক্তিত্ব তাঁকে সব দেশবাসীর কাছে আপসহীন নেত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত করেছে।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ ভূঁইয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, খালেদা জিয়া জাতির কাছে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। লড়াকু ও দৃঢ় নেতৃত্বের জন্য তিনি ভবিষ্যতেও মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হবেন।

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এক বিবৃতিতে বলেছেন, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশ একজন সাহসী গণতান্ত্রিক নেত্রীকে হারাল, যাঁর নেতৃত্ব ও ত্যাগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐক্যের প্রতীক।

ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত কল্যাণকর রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে খালেদা জিয়ার অবদান দেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন বজ্রকণ্ঠ যুগ যুগ ধরে নতুন প্রজন্মের মুক্তিকামী মানুষের পথ দেখাবে।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল এক শোকবার্তায় বলেছে, রাষ্ট্র পরিচালনায় খালেদা জিয়ার গণতান্ত্রিক ও মানবিক আচরণ দেশবাসীর কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এক শোকবার্তায় বলেছে, সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, নারীশিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন এবং স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। তিনি কোটি মানুষের দেশপ্রেম ও গণতন্ত্রের উজ্জ্বল প্রতীক ছিলেন।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, স্বাধীনতা–পরবর্তী বাংলাদেশে উদার গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ, নারীশিক্ষার প্রসার এবং আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে খালেদা জিয়ার উদ্যোগ ও ভূমিকা জাতি চিরকাল মনে রাখবে।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিরাজুল মইন জয়, ভাইস চেয়ারম্যান লিটন এরশাদ, মহাসচিব এস এম আজাদ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এক শোকবার্তায় বলেন, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে পুরো জাতি একজন গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রীকে হারাল।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর আমির ছারছীনা শরিফের পীর মাওলানা মুফতি শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমদ হুসাইন। তিনি বলেন, দেশের জন্য যখন খালেদা জিয়ার মতো একজন মান্য, পরীক্ষিত, আপসহীন ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন ছিল; তখনই তিনি দেশবাসীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে পরপারে পাড়ি জমালেন।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এক বিবৃতিতে বলেছে, খালেদা জিয়া কেবল একজন রাজনৈতিক নেত্রীই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ কারিগর। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ নীতিনির্ধারক ও কিংবদন্তি রাজনীতিককে হারাল।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এক শোকবার্তায় বলেছে, তিনি (খালেদা জিয়া) ছিলেন এ দেশের গণতন্ত্রের প্রতীক। দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য তিনি সর্বদা নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এক বিবৃতিতে বলেছে, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশ একজন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক এবং আপসহীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হারাল। রাষ্ট্র পরিচালনা, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর দীর্ঘদিনের বলিষ্ঠ ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান ভূঞা, মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান এবং নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেছেন, নব্বইয়ের দশকজুড়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও দেশের ক্রান্তিকালে সব সময়ই তিনি দলমত–নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক কর্মী ও জনগণের সাহস ও নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন।

এ ছাড়া খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশক সমিতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি ও ন্যাশনাল ল’ইয়ার্স অ্যালায়েন্স (এনএলএ)।