মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার ভোট দেওয়া: মঈন খান

জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ শনিবার ‘শিক্ষাব্যবস্থায় বিজাতীয় আগ্রাসন’ শীর্ষক সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান
ছবি: প্রথম আলো

ভোট দেওয়া মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, পাঁচ বছরের মধ্যে একবার ভোট দেব—এটি মানুষের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনচেতা, স্বাধীনতাকামী এবং তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে।

জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ শনিবার ‘শিক্ষাব্যবস্থায় বিজাতীয় আগ্রাসন’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মঈন খান এ কথা বলেন। আবদুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের হাটে, মাঠে, ঘাটে, খেতে-খামারে যে সাধারণ মানুষ রয়েছেন, তাঁদের গিয়ে জিজ্ঞেস করুন তোমার কী অধিকার? একটি অধিকার বলেন যেটি সত্যিকার অর্থে চান? তুমি কি খেতে চাও, লেখাপড়া করতে চাও, তুমি কি সুচিকিৎসা চাও, তুমি কি বাসস্থান চাও না অন্য কিছু চাও? কোনটি আগে চাও? মানুষ সবার আগে বলে সবকিছু চাই। তবে তার আগে পাঁচ বছরের মধ্যে একবার ভোট দেব—এটি মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার।

বর্তমান সরকারকে বিদায় দিয়ে সাময়িকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি তুলে ধরে মঈন খান বলেন, ‘যারা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। সেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ যাকে ভোট দেবে, তারাই পরবর্তী সরকার গঠন করবে।’ ১৯৯৬ সালের ঘটনা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি যদি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করত, তাহলে খালেদা জিয়া নির্বাচিত হওয়ার এক মাসের মাথায় পল্টনে রাজপথে ক্ষমতাকে হেলায় ছুড়ে ফেলে দিতেন না। তিনি প্রমাণ করেছেন, বিএনপি রাজনীতি করে মানুষের কল্যাণে।’

প্রফেশনালস মুভমেন্ট অব বাংলাদেশ ওই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের বিভিন্ন দিক আলোচনায় আসে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম।

মূল প্রবন্ধে অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগ শুধু ইতিহাস বিকৃতি ঘটায়নি, পাঠ্যপুস্তকেও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে বিজাতীয় বিষয়াদি প্রাধান্য দেয়। প্রতিবাদ সত্ত্বেও প্রতিবছর নতুন বই প্রণয়ন করতে গিয়ে সরকার নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে।

দেশের মানুষের চিন্তা-ধারণা—এখানে কল্পিতভাবে প্রকাশ করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, ‘এই দুটি বইয়ে যা আছে, তা দেশের মানুষের চিন্তা, ভাবনা, ধ্যানধারণা নয়। এটি সম্পূর্ণ আলাদা। ইকোনমিস্টে লেখা হয়েছিল বাংলাদেশের আজকের যে সরকার, সে সরকার দেশ পরিচালনা করে না, দেশ শাসন করে না, তারা বসে বসে ইতিহাস লিখেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সেটি সত্যিকার ইতিহাস নয়, কল্পনার ইতিহাস। বলতে বাধ্য হচ্ছি, তারা নিজেরাই বলেন স্বপ্নের কথা বলেন। তাঁরা যে ইতিহাস লেখেন, আমার মনে হয়, সেটি স্বপ্নের ইতিহাস। বাস্তবের ইতিহাস নয়।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, একটি দেশের পরিচয় শুধু উন্নয়ন দিয়ে হয় না। অথবা উন্নয়নের নামে দুর্নীতি দিয়েও একটি দেশের পরিচয় হবে না। একটি দেশের সত্যিকার পরিচয়ের জন্য যেটি প্রয়োজন, সেটি হচ্ছে সেই দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি। আজকে সেই শিক্ষা-সংস্কৃতিকে কোমলমতি বালক-বালিকার সামনে থেকে সত্যিকার সংস্কৃতিকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে এই বইগুলো এসেছে। তিনি বলেন, গালগল্প, কল্পনার ইতিহাস বা স্বপ্নের ইতিহাস দিয়ে লেখাপড়া হয় না। এটিই হচ্ছে এই বইগুলোর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। এগুলো কল্পনার বই—বিষয়টি দেশের মানুষকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বক্তব্য দেন।