সাবেকদের বক্তব্যে উঠে এল বিভক্তির প্রসঙ্গ

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের একাংশের (দীপক-মাহির) উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠান। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরেছবি: সংগৃহীত

সাড়ে তিন বছর ধরে বিভক্ত বাম ধারার ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন। একই ব্যানারে দুটি অংশ এখন সক্রিয় রয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের এই বিভক্তির কথা উঠে এল সংগঠনটির একাংশের উদ্যোগে আয়োজিত ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পুনর্মিলনীর আলোচনায়।

সংগঠনটির সাবেক নেতারা ছাত্র ইউনিয়নকে আবারও একটি পতাকার নিচে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানালেন। পাশাপাশি নিজেদের ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণাও করলেন তাঁরা। কেউ কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদের কার্যক্রম চালুর দাবিও জানান।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের (দীপক-মাহির) উদ্যোগে এই পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এর আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে সেমিনারের আয়োজন করে ছাত্র ইউনিয়নের আরেক অংশ (রাগীব-রনি)৷

২০২০ সালের নভেম্বরে ৪১তম জাতীয় সম্মেলনের পরপরই ছাত্র ইউনিয়নে বিভক্তি দৃশ্যমান হয়। তখন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হয়েছিলেন ফয়েজ উল্লাহ। পুনর্মিলনীর আলোচনায় এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব সরলভাবে না দেখার আহ্বান জানান তিনি।

ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘আমার দায়িত্বের সময় ছাত্র ইউনিয়নে দুই ধরনের বক্তব্য ছিল৷ একটি ছিল এ রকম স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সব ছাত্রসংগঠনকে আমরা এক ছাতার নিচে নিয়ে এসে একটি বড় জোট করে আন্দোলন পরিচালনা করব৷ কিন্তু সেখানে একটি আলোচনা ছিল, জোটে ধর্মীয় সংগঠনও থাকবে৷ সেই জায়গা থেকে ৪১তম জাতীয় সম্মেলনের পরে সেই বক্তব্যগুলো নিয়ে একটি পক্ষ বেরিয়ে যায়।’

আলোচনায় ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও সাবেক আমলা মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘ছাত্র ইউনিয়নে দ্বিধাবিভক্ত হবে, তা কোনো দিন চিন্তাও করিনি।’

সংগঠনের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাফিজুল ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান প্রমুখ নেতা বলেন, নীতি-আদর্শ এক থাকলে আগামী দিনে বিভক্তি দূর হবে এবং ঐক্যবদ্ধ ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রসমাজকে পথ দেখাবে।

ছাত্র সংসদ চালুর দাবি

অনুষ্ঠানে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন (মঞ্জু) বলেন, শিক্ষার সমস্যা ও শিক্ষার মান নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের প্ল্যাটফর্মে আলোচনা হওয়া উচিত৷

আদালতের আদেশের ফলে বুয়েটে ফের ছাত্ররাজনীতি চালুর যে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আদালতের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি একমত নই৷ ক্যাম্পাসে কীভাবে শৃঙ্খলা রক্ষা করা হবে, সেটি কি আদালত ঠিক করে দেবে?’

মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় তো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান৷ ছাত্ররাজনীতি বলতে কি চাঁদাবাজি, মারপিট, সিট বণ্টন, গেস্টরুম নির্যাতন—এগুলোকে আমরা বুঝব? ছাত্ররা ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবে, সেটাই ছাত্র আন্দোলন ও সংগঠনের কাজ।দুর্বৃত্তায়নের কার্যকলাপকে কেউ ছাত্ররাজনীতি নামে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবেন না আশা করব৷’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদের কার্যক্রম পুনরায় চালুর দাবি জানিয়ে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সব সংগঠন সমান অধিকার নিয়ে রাজনীতি করবে৷ একক সংগঠনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকে ছাত্ররাজনীতি বলা যাবে না৷

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা ও ঐক্য–ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, ছাত্ররাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি চলছে, একেই রাজনীতি মনে করে বিভ্রান্ত হয়ে মানুষ ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার কথা বলছে। এই অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সত্যিকার ছাত্ররাজনীতি বিনির্মাণের দায়িত্ব ছাত্র ইউনিয়নকে নিতে হবে৷

অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান আসাদুল্লাহ তারেক।

ছাত্র ইউনিয়নের এই অংশের সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংগঠনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর আলম, গাইবান্ধা জেলা শাখার সাবেক সভাপতি মিহির ঘোষ, চুয়েট শাখার সাবেক সভাপতি রাশেদুল ইসলাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা প্রমুখ৷

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী৷