সব প্রতিষ্ঠান এমনভাবে ধ্বংস হয়েছে মেরামতের বিকল্প নেই: নজরুল ইসলাম
নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে এতটাই অনুগত করা হয়েছে যে তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) যা চায়, তার বাইরে কিছুই করতে পারে না। প্রশাসনকে দলীয়করণ করে এমন একটা পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে যে প্রশাসন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সব প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যে এখন মেরামত ছাড়া বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নজরুল ইসলাম খান। ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। এর আগে ১৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপি।
অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘তারা সংবিধানে লিখবে সমাজতন্ত্র, কার্যকর করবে মুক্তবাজার অর্থনীতি। এটা এক রকমের রসিকতা। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে, আবার বলা হবে ধর্মনিরপেক্ষতা কয়েম করা হবে। দুটি কি একসাথে যায়! সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলবেন, আবার আপনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে সাংবাদিকদের মাথারও ওপর খড়্গ ঝুলিয়ে রাখবেন। এটা তো হয় না।’ এসব পরিবর্তনেই বিএনপি রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের কথা বলেছে বলে জানান বিএনপির এই নেতা।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেছেন, বিএনপি রাষ্ট্র মেরামত করবে কি রাষ্ট্র তো ভাঙচুর করেছে বিএনপি! এটা নাকি বিএনপির স্টান্টবাজি। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র তো তো বস্তু নয়। রাষ্ট্র একটা প্রতিষ্ঠান। তার কতগুলো মৌলিক বিষয় আছে, যা রাষ্ট্রগঠনে কাজ করে। যেমন সংবিধান। লিখিত হোক বা অলিখিত হোক সংবিধান প্রয়োজন। সব দেশে সংবিধানকে পবিত্র বিষয় হিসেবে মনে করা হয়। বলা হয়, এটা সর্বোচ্চ আইন। এ ধরনের একটা বিষয় নিয়ে রসিকতা করার অধিকার কারও নেই। কিন্তু এ সরকার তা করছে।
নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রতিপক্ষকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে দেওয়া হবে না। নানা কায়দায় তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হবে। আবার প্রার্থী হলে প্রচার করতে দেওয়া হবে না। পোস্টার-লিফলেট করতে দেওয়া হবে না। সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেওয়া হবে না। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কিছু মানুষ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজারো কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাংকে টাকা রেখেছে, সেই টাকার হিসাবে নতুন ১২ হাজার কোটিপতি হয়েছেন। নতুন কোটিপতি হওয়ার প্রবণতা বিশ্বের সব দেশ থেকে বাংলাদেশে বেশি। অন্যদিকে বিভিন্ন গবেষণায় এসেছে, কোভিডকালে সাড়ে তিন কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। তাহলে সাম্য কোথায়? বৈষম্য তো কমে আসার কথা, কিন্তু এটা বেড়ে যাচ্ছে। সরকার যদি বলে দেশে খুব উন্নতি হচ্ছে, তাহলে বলতে হবে, কোটিপতি হচ্ছেন তাঁরা (ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা)। অথচ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে সাম্যের জন্য। বৈষম্য কমবে। প্রত্যেক মানুষ তার ন্যূনতম মৌলিক অধিকার পাবে, তা হচ্ছে না। না হওয়ার কারণ এই অনির্বাচিত সরকার। এখন রাষ্ট্র মেরামত ছাড়া তো কোনো উপায় নেই। সেই মেরামতের লক্ষ্যেই ২৭ দফা তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের যে রূপরেখা দিয়েছে, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ। বিএনপি সহনশীল রাজনীতি করে, যা শুরু করেছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বলেন, বিএনপিই প্রথম রাষ্ট্রের দুর্বল বিষয় চিহ্নিত করে মেরামতের রূপরেখা ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশকে একটি যুগোপযোগী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যা প্রয়োজন, বিএনপি সরকার গঠন করলে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তা করা হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ যাচাই-বাছাই করে সংস্কার করা হবে।
আয়োজক সংগঠন ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মেহেদী হাসান ও দপ্তর সম্পাদক ফখরুজ্জামান সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফরহাদ হালিম ও ইসমাইল জবিউল্লাহ প্রমুখ।