প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমরাও করব, শরিকদেরও করতে হবে: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরফাইল ছবি

সবাইকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচনে জিততে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমরাও করব, শরিকদেরও করতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই নির্বাচনের রেজাল্ট আনতে হবে।’

আজ মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসব কথা বলেন।

দেশ, জাতির নিরাপত্তার জন্য বিএনপি-জামায়াত সবচেয়ে বড় হুমকি—এমন অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি মানুষকে জিম্মি করে রাজনীতি করে। বিএনপি–জামায়াতের কর্মসূচি মানেই যানবাহনে আগুন, সহিংসতা, গুপ্ত হামলা। গতকালও (সোমবার) বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে। আমরা বলতে চাই, সহিংসতা করে, সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করা যাবে না।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্বাচনের বিপক্ষে যেকোনো বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার জন্য ইতিমধ্যে অনেকে বলেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনবিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটি বাংলাদেশে অবস্থান করছে এবং নির্বাচন পর্যন্ত তারা থাকবে। ভারত, জাপান, ফিলিস্তিন, ওআইসি, আরব লীগ পর্যবেক্ষক পাঠাবে। পর্যবেক্ষকদের তালিকা আরও আছে, সেটা শিগগিরই জানা যাবে।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘ইসি বলেছে, সেনাবাহিনী কত দিন থাকবে। আমরা সেনাবাহিনীকে সব বিষয়ে বিতর্কিত করার বিপক্ষে। বাংলাদেশে সংবিধানে নির্বাচনে তাদের কী ভূমিকা, তা লিপিবদ্ধ আছে।’

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে দলের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে আছে, তাদের বলা হয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। বলপূর্বক বা ফ্রিস্টাইলের কোনো নির্বাচনের ভূমিকা কেউ নেবে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতামূলক যাকে বলে, যেটা গণতন্ত্রেরই বিষয়। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা করতে পারবে। সে সুযোগ তাদের দেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের শরিকদের কারও কোনো আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু আমি পরিষ্কার বলে দিয়েছি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকবে।’

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে—এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে বিনা প্রতিযোগিতায় কারও নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী যে–ই হোক, তার সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলাপ–আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। ক্যাবিনেটে যা হয়েছে, এটা কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নয়। ক্যাবিনেট শেষে উনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কথা বলেছেন। এটা আমরা এখনো নিশ্চিত না। এটা সব কাগজেরও নিউজ না। আজও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের আলোচনা অব্যাহত আছে।’

জাতীয় পার্টিকে কোনো আসন ছেড়ে দেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাদের করতেই হবে। অপ্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে সিট (আসন) ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই তাদের আসতে হবে।’

আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা তো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখানে স্বস্তি–অস্বস্তির কিছু নেই। আমাদের সংসদীয় দলের প্রধান ও জোটের প্রধান যেটা বলেছেন, সেটার ব্যাপারে কারও কোনো অস্বস্তি থাকলে বিচার–বিবেচনা করার সুযোগ নেই। এই অস্বস্তি অমূলক। এটা অলরেডি সেটেল্ড (মীমাংসা) হয়ে গেছে।’

কাউকে সহিংসতা করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সে আওয়ামী লীগ হোক, স্বতন্ত্র হোক, গায়ের জোরে কিছু করতে পারবে না। সে সুযোগ নেই।

দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করানো গঠনতন্ত্রবিরোধী কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগেরটা আগে, আজকেরটা আজকে। আগামীকালেরটা আগামীকাল। পরিস্থিতি ও পুনর্মূল্যায়নের বাস্তবতার নিরিখে আমরা মূল্যায়ন করি। এটাই অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চা।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো বিষয়ে কোনো জটিলতা দেখা দিলে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি (সভাপতি) ব্যবস্থা নিতে পারেন। দেশের সার্বিক গণতন্ত্র যেখানে সংকটের মুখে, বিএনপিসহ বিরোধী দল গণতন্ত্রের প্রতি নির্বাচনের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় আমাদের সভাপতির বিশেষ দায়িত্ব পালনের সুযোগও আমাদের গঠনতন্ত্রে রয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘চাওয়া-পাওয়ার হিসাব তো এখনো হয়নি। আমরা রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা করেছি। কীভাবে নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে, অবাধ হবে, নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচনটা যাতে সুন্দরভাবে, পিসফুল (শান্তিপূর্ণ) পরিবেশে হয়, যেহেতু তারা পার্টিসিপেন্ট (প্রার্থী), সে জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। সমন্বয়ের ব্যাপারে কথা হচ্ছে। এখানে অন্য কোনো বিষয় নেই। আরেকটা কথা বলা হচ্ছে, রওশন এরশাদ বিরোধী দলের নেতা। তাদের দলীয় অভ্যন্তরীণ যে সংকট, সেটার সঙ্গে আমাদের কিছু নেই। আমরা বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে সংসদীয় দলের নেতা তিনি আলাপ করতেই পারেন।’

সংসদ সদস্যদের হলফনামায় বিপুল সম্পদের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি তো ওইভাবে দেখি না। আমি দেখব নির্বাচন কমিশন কী বলছে। নির্বাচন কমিশন অনেকের মনোনয়ন বাতিল করে দিয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন যদি কাউকে দুর্নীতিবাজ মনে করে, সেটা তাদের ব্যাপার। যদি দুর্নীতি দমন কমিশন এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন না করে, তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়, অনুমতিপ্রাপ্ত কাউকে তো এই মুহূর্তে আপনি দুর্নীতিবাজ বলতে পারেন না।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, বি এম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।