বিদেশিরা অর্থ পাচারের তথ্য দেয় না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন
ফাইল ছবি

অর্থ পাচার নিয়ে তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে দেশগুলো ‘প্রাইভেসি অ্যাক্টের’ অজুহাত দেখায়।

মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পদ্মা সেতু নিয়ে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। ‘আমাদের অর্থে আমাদের সেতু’ শিরোনামের বইটির সম্পাদনা করেছেন তিনি।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের দেশের বহু টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এরপর আমরা যদি বলি এই এই লোক টাকা পাচার করছে, তাদের তথ্য দাও। তখন তারা বলবে, প্রাইভেসি অ্যাক্টের কারণে আমরা তথ্য দিতে পারব না। প্রায়ই দেখবেন বাংলাদেশের টাকা নাকি সুইস ব্যাংকে অনেক বাড়ছে। কে সেই ব্যক্তি, কে এই টাকা ডিপোজিট করেছে? সেখানে কিছু বলবে না। এটা প্রশ্ন করা উচিত, আর ইউ নট হেল্পিং মানি লন্ডারিং?’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশিদের বিদেশে অর্থ পাচার বেড়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) বিভিন্ন সময়ে সুইস ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের নাগরিকদের অর্থ পাচারের তথ্য চেয়ে কোনো সাড়া পায়নি।

অন্য দেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে তথ্য পেতে হলে একটি আন্তর্জাতিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত হতে হয়। বাংলাদেশ এখনো তা পারেনি। সে কারণে অর্থ পাচারের বিষয়ে কোনো তথ্য পায় না।

নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশিরা পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু তাঁদের পরামর্শ সব সময় সঠিক নয়। তাঁরা পরামর্শ দিলেই যে আমরা লাফালাফি করব, আমাদের জ্ঞানবুদ্ধি জলাঞ্জলি দেব, সেই মানসিকতা পরিহার করার সময় এসেছে।’

আব্দুল মোমেন আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ওপরে বই প্রকাশ করে আমরা খুশি। তবে এই বইতে দুজনের লেখা নিতে পারিনি। একজন জামিলুর রেজা চৌধুরী ও অপরজন আমার বড় ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বক্তব্য দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘পদ্মা সেতু বাঙালির আত্মমর্যাদার নিদর্শন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও অদম্য সাহসের জন্য পদ্মা সেতু হয়েছে। যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতুর চ্যালেঞ্জও নিয়েছেন তিনি। এটা শুধু ইট-পাথরের সেতু নয়, এই সেতু আমাদের আবেগ ও গৌরবের অধ্যায়।’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দিল, তখন অনেকেই আশঙ্কায় ছিলেন, এটা বোধ হয় আর হবে না। পদ্মা সেতু শুধু সেতু নয়, আমাদের জন্য নদী পারাপারের সেতু নয়, এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস।’
সেতু প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, শুধু বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে ও কাজকে এগিয়ে নিতে হয়েছে। চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি যে সুযোগ দিয়েছিল, সেটি তাঁরা গ্রহণ করেছেন ও সফলভাবেই করেছেন।

এদিকে ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা, গত পরশু দিনও ফাইল দেখেছেন, সেই টাকা এখন পর্যন্ত বাড়েনি বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।