মিয়ানমারের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, সরকারকে মেরুদণ্ড সোজা করার তাগিদ বিএনপির

রাজধানীর নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ছবি: প্রথম আলো

সরকারের ‘নতজানু ও দুর্বল কূটনীতি’র সুযোগেই মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। মিয়ানমারের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ বন্ধে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ চেয়েছে দলটি। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় মেরুদণ্ড সোজা করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৮ আগস্ট থেকে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির গোলাগুলি শুরু হয়। তার পর থেকে থেমে থেমে সেখানে গোলাগুলি চলছে। এরই মধ্যে রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোড়া একটি মর্টার শেল এসে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখায় পড়ে গতকাল শুক্রবার এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় এক শিশুসহ পাঁচ রোহিঙ্গা আহত হয়েছে।

মিয়ানমারের এমন বেপরোয়া তৎপরতা ও নিক্ষিপ্ত মর্টারের গোলার আঘাতে নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।

মিয়ানমারের এমন আচরণে সরকারের প্রতি বিএনপির পরামর্শ কী, সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার একই ঘটনা বারবার ঘটিয়ে যাচ্ছে। অথচ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সরকার বারবার ‘প্রটেস্ট নোট’ দিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। সরকারের যেখানে মেরুদণ্ড সোজা হয়ে দাঁড়ানোর কথা কিন্তু তারা কিছুই করতে পারছে না। আমাদের এটাই প্রশ্ন, সরকারের দুর্বলতা কোথায়। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া সরকার যে দেশ চালাচ্ছে, সেটা তো মিয়ানমার সরকারও জানে। তাই সরকার শক্তভাবে কিছু করতে পারছে না।

সরকারকে আগে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী বারবার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার থেকে গোলা ফেলছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ১২০ মিটারের ভেতরে পড়ে মর্টার শেল বিস্ফোরিত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এমনিতেই ১২ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে মহাসংকটে আছে বাংলাদেশ। এখন নতুন করে সীমান্তে সমস্যা তৈরি করছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। এটা সম্ভব হচ্ছে দেশে বর্তমান ফ্যাসিবাদী শাসকের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের ঘটনার পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেও প্রাণহানি হচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময়ও সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতির সুযোগেই এসব ঘটনা ঘটছে।

এদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ রাজধানীর ধানমন্ডিতে ঢাকা আহছানিয়া মিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘটনা জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরা হবে।