বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিও করেছেন তাঁরা। আইনজীবীদের নতুন মোর্চা ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের (ইউএলএফ) ব্যানারে আজ রোববার অনুষ্ঠিত পদযাত্রা–পরবর্তী সমাবেশে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এ দাবি জানান।
‘অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ এবং ‘সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে আইনজীবী পদযাত্রা ও সমাবেশ’—এমন ব্যানার নিয়ে ইউএলএফ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে থেকে বেলা দেড়টার দিকে বিএনপি সমর্থক ও সমমনা আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের মাজার ফটক দিয়ে বের হয়ে পদযাত্রা শুরু করেন। এরপর শিক্ষা ভবন, কদম ফোয়ারা ও জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশের সড়ক হয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে পদযাত্রা শেষ হয়। এরপর প্রধান ফটকের বাইরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা জীবনে কোনো দিন শুনি নাই, বিচার বিভাগের ওপর কোনো দেশ স্যাংশন দেয়। কারণ, এই বিচার বিভাগ হচ্ছে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা। কিন্তু আমাদের দেশের বিচারব্যবস্থা খালেদা জিয়ার জন্য স্বাধীন হতে পারে নাই।…প্রধানমন্ত্রী বলছেন স্যাংশনে নাকি তাঁরা কোনো ভয় পান না।…এই দেশে স্বাধীনতার পরে আজ পর্যন্ত মানুষ এই দেশে কোনো স্যাংশন দেখে নাই।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানও। দেশে গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। জয়নুল আবেদীন বলেন, বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। এ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছে—বিদেশিরাও তা জেনে গেছেন। সে কারণেই এখন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আরও স্যাংশন আসবে।…আগামী অক্টোবরের মধ্যেই…আপনাকে বিদায় নিতে হবে। আপনি যত তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে পারেন—এই দেশের জন্য ততই মঙ্গল।’
পুলিশের উদ্দেশে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আপনারা আমাদের ভাই, কারও না কারও সন্তান, আপনারা আপনাদের ব্যারাকে থাকেন। গণতন্ত্রের আন্দোলনে আপনারা হস্তক্ষেপ করবেন না।’ খালেদা জিয়াকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠানোর দাবিও জানান তিনি।
ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের সহ–আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। বাংলাদেশে নির্বাচন হবে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে স্বাধীন–নিরপেক্ষ নির্বাচন, খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হবে।…দয়া করে ক্ষমতা ছেড়ে দিন, সংসদ বিলুপ্ত করেন। নির্দলীয়–নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেন।’
ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, কাল (গতকাল) আইনমন্ত্রী বললেন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করতে হবে। আজ আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন তাঁদের কিছু করার নেই, আদালতে যেতে হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালে আছেন। তাঁর সঙ্গে আজ তামাশা করা হচ্ছে। এসব কথা বলে জাতির সঙ্গে আজ প্রতারণা করা হচ্ছে।
ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের (ইউএলএফ) সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আইনজীবী মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আইনজীবী মোহাম্মদ মহসীন রশীদ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, কে এম জাবির, ইউএলএফের সমন্বয়ক গাজী কামরুল ইসলাম ও সৈয়দ মামুন মাহবুব বক্তব্য দেন।