জাকসু নির্বাচনের আগের রাতে নিয়ম ভেঙে ক্যাম্পাসে সাবেক শিক্ষার্থীদের আনাগোনা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ভবনছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের আগের রাতে নিয়ম ভেঙে অনেক সাবেক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েকজন প্রার্থী এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের আগে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বুধবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সাবেক শিক্ষার্থীসহ বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার রাতে জাকসু নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান অভি, শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন বাবর, সদস্যসচিব ওয়াসিম আহমেদ অনীক, যুগ্ম আহ্বায়ক  রোজেনসহ বিভিন্ন নেতাকে ক্যাম্পাসে দেখা গেছে। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গীসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের দল বেঁধে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

এদিকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমানকে দেখা গেছে, তিনি নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের একটি কক্ষে বসে ফোনে কথা বলছেন। তবে ভিডিওটি কখনকার, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিকউস সালেহীনসহ কয়েকজন নেতাকেও ক্যাম্পাসে দেখা গেছে।

ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন, ‘নির্বাচনের আগের রাতে নাটকীয়তা করছে জাকসু নির্বাচন কমিশন। সাবেক ছাত্রদল নেতা, যুবদল নেতা, আহ্বায়ক ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের নিয়ে কমিশন অফিসে বৈঠক, দিনের পরিবর্তে রাতে ব্যালট বক্স পরিবহন ও ভিডিও করতে নিলে ছাত্রদল নেতার সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নেওয়া, বহিরাগত সমাগম এড়ানোর ব্যর্থতা, পোলিং এজেন্ট নিয়ে সিদ্ধান্তে না আসা, ডোপ টেস্ট নিয়ে ধোঁয়াশা—  সব মিলিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক একটি পরিস্থিতি স্পষ্ট।’

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে ব্যালট বক্স নিয়ে যাওয়ার সময় ভিডিও ধারণ করছিলেন তিনি। এ সময় ছাত্রদলের আহ্বায়কসহ কয়েকজন সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলেন। ওই সাংবাদিক ভিডিও করছে দেখতে পেয়ে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান রোজেন ওই সাংবাদিকের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও মুছে ফেলেন।

এ বিষয়ে এক ফেসবুক পোস্টে রোজেন লেখেন, ‘আমি ছাত্রদল ঘোষিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে কাজ করছি। তাই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনায় নির্বাচনের দিনের অনুমতি পত্র (পাস) আনতে যাই। কিন্তু আসার সময় গোপনে আমার ভিডিও করা হয়, যা আমার প্রাইভেসি ভঙ্গ করে। এই বিষয়ে প্রতিবাদ করি ও এটি কেন করছে জানতে চাই? উক্ত ব্যক্তি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। সেখানে সিসি ক্যামেরা আছে, যা দেখলে সত্য বের হয়ে আসবে।’

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে ক্যম্পাসে সাবেক শিক্ষার্থীরা যাচ্ছেন, এটি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জেনেছি। এরপর নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিটি প্যানেলের জন্য ১০ জন পর্যবেক্ষক রাখার সুযোগ দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম। পরে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে সরাসরি বাইরে চলে এসেছি।’

নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের অনেকেই ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের অনেককেই ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম বলেন, ‘সাবেক শিক্ষার্থীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশ। আবেগ ও স্মৃতি জড়ানো ক্যাম্পাসে দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন হচ্ছে। তাই অনেকে ক্যাম্পাসে এসেছেন। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে নির্বাচনের সময়ে তাদের অবস্থান করা যাবে না। বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পর অনেকে ক্যাম্পাস থেকে ইতিমধ্যে চলে গেছেন, বাকিরাও যাচ্ছেন। সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলকে আচরণবিধি ও প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ রইল।’