টিএসসিতে বসে প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপি–জামায়াতের নেতা–কর্মীরা: আবদুল কাদের

নির্বাচনী প্রচারে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবদুল কাদের। মল চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ৭ সেপ্টেম্বরছবি: দীপু মালাকার

প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবদুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি–জামায়াতের নেতা–কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বসে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আজ রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল কাদের এ কথা বলেন। এ সময় বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী (জিএস) আবু বাকের মজুমদারও।

আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা সব সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালিয়েছি। কিন্তু দেখেছি, ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন। জামায়াত–শিবির বাড়িবাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছে। শিবিরের প্রার্থীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মিলনমেলার আয়োজন করছেন। বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীরা টিএসসিতে বসে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এগুলো স্পষ্টভাবে আচরণবিধি ভঙ্গ এবং নৈতিক সমর্থন হারানোর শামিল।’

এই ভিপি প্রার্থী বলেন, ‘আমরা যখন প্রচারণায় যাচ্ছি, শিক্ষার্থীরা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করছেন, বিশেষ করে নারীরা। কারণ, আমরা দীর্ঘদিন ধরে নারী শিক্ষার্থীদের সমস্যা, অনলাইনে হয়রানি, হলে অযৌক্তিক নিয়মকানুন—এসব নিয়ে কাজ করেছি। আমরা নতুন করে “নারীবান্ধব” সাজতে যাইনি। তাই শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতি আস্থা দেখাচ্ছেন।’

যাঁরা খাওয়াচ্ছেন বা টাকা খরচ করছেন, তাঁদের দেখে শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আবদুল কাদের বলেন, ‘আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বাংলাদেশের বিবেক। আপনার ভোট আপনার বিবেক দিয়ে দিন। কে অতীতে আপনার জন্য লড়েছে, কে আপনার সমস্যায় পাশে দাঁড়িয়েছে, তা দেখে সিদ্ধান্ত নিন।’

‘নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চেষ্টা হচ্ছে’

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ভোটকেন্দ্রগুলো অস্বাভাবিকভাবে বসিয়েছে। আমরা মনে করি, এখানে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চেষ্টা হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে এই প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘৯ সেপ্টেম্বরের নির্বাচন ঘিরে আমরা অনেক আগে থেকেই আশঙ্কার কথা জানাচ্ছি। আমরা দেখেছি, নির্বাচন কমিশন প্রতিদিনই তাদের নিরপেক্ষতা হারাচ্ছে। যাঁরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

এ সময় আবু বাকের বলেন, ‘বিশেষ করে কেন্দ্রগুলো যেভাবে স্থাপন করা হয়েছে, তা শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকূল নয়। একটা ভবনে তিনটা হলকে দেওয়া হয়েছে। আবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও কুয়েত–মৈত্রী হলকে দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আর শামসুন নাহার হলকে দেওয়া হয়েছে উদয়ন স্কুলে। এসব উল্টাপাল্টা করে দেওয়া হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা ভোটে অংশ নিতে না পারেন। এটা স্পষ্টভাবে নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিং।’

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ৯ সেপ্টেম্বর কোনো ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং হয় কি না। কারণ, আমরা দেখেছি, ছাত্রলীগ কীভাবে ক্যাম্পাসকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। এবার আবার নতুন করে কেউ একই কাজ করে কি না, সেটি নজরদারিতে রাখতে হবে।’

আবু বাকের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় বিএনপি–জামায়াতের লোকজন তাঁদের পরিবারের কাছে গিয়ে ভোটের জন্য চাপ দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে প্রশাসন থেকেই। আমি স্পষ্টভাবে বলছি, যদি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের যোগ্য প্রতিনিধিকে নিজেরাই বেছে নেবেন উল্লেখ করে এই জিএস প্রার্থী বলেন, ৯ সেপ্টেম্বরের নির্বাচন হবে ব্যালট–বিপ্লব। কোনো গোষ্ঠী বা দলের চাপিয়ে দেওয়া প্রার্থীকে শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করবেন না।