‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রুখতে’ চিরুনি অভিযান চায় ডাকসুসহ ৪ ছাত্র সংসদ
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ তুলে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। একই সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান চালাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্র সংসদগুলোর চার ভিপি (সহসভাপতি)।
আজ মঙ্গলবার দেওয়া এই বিবৃতিতে সই করেছেন ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম, জাকসুর আব্দুর রশিদ জিতু, চাকসুর ইব্রাহিম হোসেন রনি এবং রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ)। ‘সম্মিলিত ছাত্র সংসদ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা-শ্রমিকসহ মুক্তিকামী জনগণ ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৮ বছরের দুঃসহ ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করেছে। সহস্র শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশ যখন ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর চিরস্থায়ী বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই বিতাড়িত ফ্যাসিস্ট, গণহত্যাকারী ও সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ তাদের দোসররা দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে এক গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।’
চার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপিরা বলেন, ইতিপূর্বে লগি-বৈঠার তাণ্ডব থেকে শুরু করে দেড় দশক ধরে গুম-খুন, গণহত্যা ও রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। প্রায় দুই হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই বিপ্লবের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব।
ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক দেশজুড়ে নাশকতা, চোরাগোপ্তা হামলা, অগ্নিকাণ্ড, ককটেল বিস্ফোরণ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান হলেও সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটনে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা সন্তোষজনক নয় বলে মনে করে সম্মিলিত ছাত্র সংসদ।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অবিলম্বে এই দেশদ্রোহী গণহত্যাকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত টহল জোরদার করতে হবে এবং দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে জাতিকে নিরাপদ করতে হবে। পাশাপাশি জুলাইয়ে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান উন্নতি জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে।’
চলমান পরিস্থিতিতে ‘আওয়ামী দুর্বৃত্তপনার’ বিরুদ্ধে সরকারকে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণেরও দাবি জানান চার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপিরা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপতৎপরতা ইতিমধ্যে শুরু করেছে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা। জনগণের জানমালের হেফাজত এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের শিকড় সমূলে উৎপাটনে সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
চার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নেতারা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে জুলাই গণহত্যায় জড়িত সন্ত্রাসীরা এখনো নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এসব আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
একই সঙ্গে গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলমত–নির্বিশেষে দেশের সব দেশপ্রেমিক নাগরিক, ছাত্র-জনতা-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত ছাত্র সংসদ।