নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের উদ্যোগ

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, জাসদের একাংশের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান
ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বলয়ের বাইরে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের লক্ষ্যে নতুন একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। বামপন্থী ও প্রগতিশীল পাঁচটি দল ইতিমধ্যে এই উদ্যোগে সম্পৃক্ত হয়েছে। বর্ষীয়ান রাজনীতিক ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য এই উদ্যোগের সমন্বয় করছেন। তিনি ইতিমধ্যে চারটি দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ছাড়াও বাসদ (খালেকুজ্জামান), জাসদ (আম্বিয়া) ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। দলগুলোর নেতারা প্রাথমিকভাবে নতুন জোটের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। তবে এই পাঁচ দলের নেতারা এখনো একসঙ্গে বসেননি।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের উদ্যোগটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। কয়েকটি দলের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন। তারাও আগ্রহ দেখিয়েছে। দুই মেরুর বিপরীতে বিকল্প মেরুকরণ হিসেবে একটি বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট হতে পারে। জানুয়ারিতে সবাই একসঙ্গে বসে আলোচনা করে নতুন জোটের ঘোষণা দিতে পারেন।

বর্তমানে আটটি বামপন্থী দলের সমন্বয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট আছে। সিপিবি ও বাসদ এই জোটের শরিক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন যে জোট গঠনের আলোচনা চলছে, সেখানে সিপিবি ও বাসদ যোগ দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। একটি হতে পারে, বাম গণতান্ত্রিক জোটের পাশাপাশি নতুন জোটেও তারা থাকবে। আবার যুগপৎ কর্মসূচিও হতে পারে।

রাজনীতির মাঠে জোট গঠন ও ভাঙন নিয়মিত ঘটনা। তবে জাতীয় নির্বাচন সামনে এলে জোট গঠনের প্রক্রিয়া বেশি দেখা যায়। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা গঠন করেছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে এটি এখন অকার্যকর। সম্প্রতি আন্দোলনের কৌশল হিসেবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট অনানুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সমমনা ১২-দলীয় জোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এককভাবে কর্মসূচি পালন করবে। এর বাইরে আরও ছয়টি দল মিলে ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ গঠন করা হচ্ছে। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকটি শরিক দল এবং বাম জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ সাতটি দল-সংগঠন নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করা হয়েছে। এই দল ও জোটগুলো যুগপৎ আন্দোলনে যাবে।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল সক্রিয় আছে। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্টে ছিল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। দলটির প্রধান কাদের সিদ্দিকী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ নিয়েও রাজনীতির মাঠে আলোচনা তৈরি হয়েছে।

তবে নতুন বাম প্রগতিশীল জোট গঠনের উদ্যোক্তারা বলছেন, তাঁরা যে জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটা নিছক নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়। তাঁদের মূল লক্ষ্য হলো, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বের বাইরে গিয়ে একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি দাঁড় করানো।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) প্রথম আলোকে বলেন, এখন দেশের রাজনীতিতে সংকট চলছে। দুই দলীয় জোট রাজনীতিকে খেলায় পরিণত করেছে। এই জায়গা থেকে উত্তরণের জন্য তাঁরা নতুন জোটের আবির্ভাব ঘটাতে চান। এ জন্য বাম জোটের বাইরে গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দল, সংগঠন ও ব্যক্তিদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। আগামী ২ জানুয়ারি ঐক্য ন্যাপের নেতাদের সঙ্গে তাঁদের বসার কথা রয়েছে।