সাত তারিখ সারা দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন কিংবা জিতবে এবার নৌকা—এ রকম গান সাউন্ড সিস্টেমে বেজেছে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। মনোনয়ন ফরম বিক্রির দ্বিতীয় দিনে রোববারও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় ঢল নেমেছিল নেতা-কর্মীদের।
কর্মী-সমর্থক ও অনুসারীদের পাশাপাশি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন বাদক দল। বাদ্যের তালে তালে মনোনয়নপ্রত্যাশীর নামে স্লোগান দিয়ে গেছেন তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা। আবার কেউ কেউ এসেছিলেন মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে। বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে তাঁরা অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। তবে তাঁদের এই চেষ্টার কারণে সেখানে কিছু সময় টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছিল।
মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম দিনে শনিবার নেতা-কর্মীদের প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে একপর্যায়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। যে কারণে রোববার ব্যবস্থাপনার কিছুটা পরিবর্তন আনতে দেখা গেছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা যাতে কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য কড়াকড়ি ছিল। বাঁশের কাঠামো দিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ এবং বের হওয়ার আলাদা পথ তৈরি করা হয়। দুই পথেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ ছিল। এ ছাড়া কার্যালয়ের সামনের সড়কের কিছু অংশে লোহার ব্যারিকেড (প্রতিবন্ধক) বসানো হয়। এই প্রতিবন্ধকের বাইরে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কর্মী, সমর্থক ও অনুসারীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাঁরা সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে দিনভর স্লোগান দিয়ে গেছেন।
ফরম কিনতে আসা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেওয়ায় দিনভর গুলিস্তান এলাকায় যানজট ছিল। যে কারণে শত শত মানুষকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গুলিস্তান এলাকা পার হতে হয়েছে।
কার্যালয় পর্যন্ত যেতে পারেননি ওবায়দুল কাদের
নেতা-কর্মীদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে এদিন তিন দফা চেষ্টা করেও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রত্যক্ষদর্শীদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দুজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জিপিও মোড় হয়ে কার্যালয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে তিনি কার্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। এই পথ হয়ে দুই দফা চেষ্টা করেও কার্যালয়ে ঢুকতে না পেরে বঙ্গভবনের সামনে গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে আবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আসতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই পথ হয়েও তিনি আসতে পারেননি।
দ্বিতীয় দিনে ১২১২টি ফরম বিক্রি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে শনিবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয় দিনে রোববার ১ হাজার ২১২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়। শনিবার ফরম বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৭৪টি। এ নিয়ে গত দুই দিনে ২ হাজার ২৮৬টি ফরম বিক্রি হয়েছে। যার মূল্য ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এবার ফরমের দাম ৫০ হাজার টাকা।
এদিন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আরশাদ আদনান। তিনি পাবনা-৫ আসন থেকে ফরম সংগ্রহ করেছেন। হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন হাইকোর্টের আলোচিত আইনজীবী সায়েদুল হক চৌধুরী। বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সম্পাদক নঈম নিজাম মনোনয়ন ফরম কিনেছেন কুমিল্লা-১০ আসনের জন্য। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন মৌলভীবাজার-১ আসনে এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ছোট ভাই সৈয়দ এ হাসান মাদারীপুর-৩ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এ ছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমানের দুই ছেলে, এক মেয়ে, জামাতাসহ ছয়জন পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া) আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম তুলেছেন।
অন্যদিকে অনলাইনে ঢাকা-১৭ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ও জমা দিয়েছেন মোহাম্মদ এ আরাফাত।