বিএনপির ১১০০ ইফতার অনুষ্ঠান, নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেনছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

মাসব্যাপী গণ–ইফতারের মাধ্যমে কার্যত নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার পরিকল্পনা নিয়েছিল বিএনপি। মাস শেষে দলটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, তাদের এই কর্মসূচি একদিকে ধর্মীয়, অন্যদিকে রাজনৈতিক—দুই দিক থেকেই সফল এবং কার্যকর হয়েছে। সারা দেশে ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি এবং তাদের সক্রিয় করা গেছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, পুরো রমজানে সব মহানগর, জেলা, উপজেলাসহ একবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ১১০০ ইফতার অনুষ্ঠান হয়েছে। নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুদানে বেশির ভাগ ইফতারের আয়োজন হয়েছে খোলা মাঠে। এতে সক্রিয় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ সমর্থক এবং নিম্ন আয়ের মানুষেরও অংশগ্রহণ দেখা যায়। ফলে নেতা-কর্মীদের ঘরোয়া ইফতার অনুষ্ঠান অনেক জায়গায় গণ–ইফতারে রূপ নেয়। এতে ময়মনসিংহ মহানগরসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার সম্মুখীনও হতে হয়। জেলা ও মহানগরসহ ৫০টির মতো ইফতার অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চু্৵য়ালি বক্তব্য দেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ জ্যেষ্ঠ নেতারাও অংশ নেন।

অবশ্য ইফতার অনুষ্ঠানকে একটি ‘সাংগঠনিক কার্যক্রম’ বলেই মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাজনীতি মানে সব সময় যে মিছিল-মিটিং তা নয়, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নানা কিছু অভিযোজন হয়। গণ–ইফতার একটি ভালো কর্মসূচি। এতে রাজনৈতিক বক্তব্যও এসেছে, নেতা-কর্মীরাও সক্রিয় হয়েছে।

লক্ষ্য ছিল নেতা–কর্মীদের সক্রিয় করা

সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, কার্যত মাঠের রাজনৈতিক কর্মসূচিহীন রমজানের মাসটিতে মামলার ভারে ক্লান্ত ও কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্য থেকে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়। এর লক্ষ্য, দীর্ঘ আন্দোলনে জেল-জুলুমে হতাশ হয়ে পড়া মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা আস্থার পরিবেশ তৈরি করা। এ কারণে দলের কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের বাসায় গিয়ে নীতিনির্ধারণী নেতারা তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। পাশাপাশি বিগত আন্দোলনে গুম, খুন এবং অঙ্গহানির শিকার নেতা-কর্মীদের পরিবার ও স্বজনদের অর্থসহায়তা ও ঈদসামগ্রীও দেওয়া হয়। রমজানে পরিকল্পিত এই কর্মসূচির মাধ্যমে কার্যত নেতা-কর্মীদের আবার সংগঠিত এবং সক্রিয় করাই এর লক্ষ্য। সারা দেশে ইফতার অনুষ্ঠানগুলোতে বিপুল অংশগ্রহণে নীতিনির্ধারকেরা সন্তুষ্ট। এর মধ্যে ময়মনসিংহ, বগুড়া, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, সিলেট, ঝিনাইদহ, যশোর, নওগাঁ, চট্টগ্রামের কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় খোলা মাঠে ইফতারের আয়োজন ছিল উল্লেখযোগ্য।

বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ) সৈয়দ এমরান সালেহ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের সময় ২৭ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। লাখো মামলায় অসংখ্য নেতা-কর্মী এখনো ফেরারি জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের ব্যক্তিগত জীবন বিপর্যস্ত করে ফেলেছিল। ইফতার অনুষ্ঠানগুলো নেতা-কর্মীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে, এই কর্মসূচি তাদের উজ্জীবিত করেছে।

৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির মহাসচিবসহ সারা দেশে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে কারাবন্দী করা হয়। রমজানের আগে বেশির ভাগ নেতা-কর্মী জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু সরকারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর দলের অনেকের মধ্যে হতাশা ভর করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে এবার রমজানে সারা দেশে ইফতার মাহফিলের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির কৌশল নেয় বিএনপি। সেই সঙ্গে সব সাংগঠনিক ইউনিটে যথাসম্ভব গরিব-অসহায় মানুষের মধ্যে ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

বিএনপি

লক্ষ্য সফল, দাবি বিএনপির

যদিও রমজানে ঘটা করে বিএনপির ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং গরিব মানুষের পাশে না দাঁড়ানোর অভিযোগ করে সরকারের একাধিক মন্ত্রী দলটির সমালোচনা করেছেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তারা (বিএনপি) একজন গরিব মানুষকেও এই কষ্টের দিনে রোজার মাসে কোনো প্রকার সাহায্য করেনি। ইফতারসামগ্রী বিতরণ করেনি। তারা বড়লোকদের নিয়ে বড় বড় হোটেলে ইফতার পার্টি করেছে। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সারা দেশে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করছেন।

তবে এ বিষয়ে বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইফতার পার্টি করেছি, গণ–ইফতার করেছি এবং ইফতারসামগ্রীও বিতরণ করেছি। এটা সফল এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে করেছি নেতা-কর্মীদের প্রদত্ত টাকায়। এমন খারাপ সময়ে বিএনপি যা করেছে, ক্ষমতাসীন লুটেরা রেজিম (শাসন) এর ধারেকাছেও নেই।’