আমরা ধর্মকে কখনো ব্যবহার করিনি, করব না: জামায়াতের আমির

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানছবি: সংগৃহীত

‘আমরা ধর্মকে কখনো ব্যবহার করিনি, করব না’—এ দাবি করে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘ধর্ম আমাদের চিন্তার অঙ্গ, আমাদের কলিজার অংশ। আমরা ধর্ম নিয়েই কাজ করি, ধর্মকে ব্যবহার করি না।’

কারা ধর্মকে ব্যবহার করেন, সে প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, ‘নির্বাচনের সময় নতুন করে যাঁরা বেশি বেশি নামাজ শুরু করেন, টুপি পরেন, তসবিহ হাতে নিয়ে ঘোরেন, ধর্মকে তাঁরাই বোধ হয় সম্ভবত ব্যবহার করেন। আমরা কিন্তু সারা বছর তসবিহ হাতে নিয়ে ঘুরাই না, তসবিহ বুকে নিয়ে ঘুরাই। আমরা আমাদের কাজগুলো আমাদের বিশ্বাসের আওতায় করতে চাই। এখন যে যেভাবে বোঝেন, এটা তাঁদের ব্যাপার।’

জামায়াত ও তাদের মিত্র দলগুলো ধর্মকে ব্যবহার করছে—বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এ কথা বলেন শফিকুর রহমান। আজ সোমবার ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দূতাবাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

জাতীয় নির্বাচন পেছানোর কোনো শঙ্কা দেখেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না। এটা উচিত নয় বলে মনে করি। আমরা মনে করি, ফেব্রুয়ারির ঘোষিত সময়সীমার ভেতরে নির্বাচন হওয়াই দেশের জন্য একান্ত প্রয়োজন। এর সামান্য কোনো ব্যত্যয় ঘটলে দেশ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারও দ্বারাই দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তা আমরা চাই না। আমরা দল বা ব্যক্তির জন্য রাজনীতি করি না। আমাদের রাজনীতি জনগণের জন্য। কথায় নয়, কাজে আমরা এটার প্রমাণ দিতে চাই।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে রাজনীতিতে কোনো সংকট দেখছেন কি না, জামায়াত আমিরকে এমন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি বলেন, ‘সুস্থতা-অসুস্থতা আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। দেশবাসী তাঁর অসুস্থতার জন্য তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে দোয়া করছে। কিন্তু আমিও তো মরব। আমরা কেউ তো চিরদিন থাকব না। আমাদের এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে। আমাদের বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সমাজের চাকা চলা-অচল হওয়ার সম্পর্ক থাকা উচিত নয়। তবে যাঁর যেটুকু শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পাওয়ার, সে যেন সেটা পান, সেদিকে সবার খেয়াল রাখা উচিত।’

আরও পড়ুন

‘২০০ আসনে জিতলেও জাতীয় সরকার করবে জামায়াত’

ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে হবে, সব মানুষের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে—এসব বিষয়ে জামায়াতের চিন্তাভাবনা জানতে চাওয়া হয় বৈঠকে। জামায়াত নির্বাচিত হলে প্রথম ১০০ দিনে জনগণের প্রতি তাদের কী বক্তব্য বা করণীয় থাকবে, সে ব্যাপারেও জানতে চাওয়া হয়।

‘আমরা বলেছি, আমাদের সবকিছুই ফ্রেম করা আছে। যখন যেটা প্রযোজ্য, সেটা আমরা সামনে রিলিজ (প্রকাশ) করব,’ বলেন জামায়াত আমির।

আরও পড়ুন

ইইউর প্রতিনিধিরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ দেখতে চান উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা বলেছি, আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ও দেশের জনগণের ভালোবাসায় আমরা নির্বাচিত হলে সেই অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশই আমরা গড়ব, ইনশা আল্লাহ। আমরা কোনো দলকেই বাদ দেব না। আমরা দেশের স্বার্থে দারুণভাবে অনুভব করি যে অন্তত আগামী পাঁচটা বছর দেশের স্থিতিশীলতা, অর্থনীতি ফিরিয়ে আনা, সমাজে আইনের শাসন কায়েম করা এবং সমাজ থেকে দুর্নীতিকে নির্মূল করা বা বিদায় দেওয়ার জন্য প্রয়োজন একটি জাতীয় সরকারের। আমরা নির্বাচিত হলে সেই সরকারটাই গঠন করব।’

জামায়াতের সঙ্গে জাতীয় সরকারে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের কাছে দুটি প্রত্যাশার কথাও উল্লেখ করেন শফিকুর রহমান। এগুলো হলো—এক. কেউ নিজে দুর্নীতি করবেন না এবং দুর্নীতিকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেবেন না; দুই. সবার জন্য সমান বিচার নিশ্চিত করা, এ ব্যাপারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না করা। কমপক্ষে এই দুটি ব্যাপারে যাঁরা একমত হবেন, তাঁদের নিয়ে সরকার গঠন করতে আগ্রহী জামায়াত। শফিকুর রহমান বলেন, ‘এমনকি আল্লাহর যদি ইচ্ছা হয় যে ২০০ আসনেও আমরা বিজয়ী হয়ে যাই, তারপরও আমরা এটা করব, ইনশা আল্লাহ।’

একই দিনে সাধারণ নির্বাচন ও গণভোট সম্পর্কে জামায়াত আমির ইইউর প্রতিনিধিদের বলেছেন, একই দিনে দুটো নির্বাচন হলে দুটো নির্বাচনই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। ভোটার টার্নওভার কম হতে পারে। সে জন্য জামায়াত দুটো নির্বাচন আলাদা আলাদা করার দাবি জানিয়েছিল বলেও তিনি বৈঠকে উল্লেখ করেন।

এর বাইরে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির নির্বাচন, দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অভিবাসন, শিক্ষা বিনিময়, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ইত্যাদি বিষয়েও ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান জামায়াতের আমির।