খালেদা জিয়া লন্ডনে ছেলের বাসায়, স্বাস্থ্য স্থিতিশীল
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে পারিবারিক পরিবেশে মানসিক দিক থেকে ভালো আছেন। দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল শুক্রবার তাঁকে তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বাসায় নেওয়া হয়েছে।
লন্ডন থেকে বিএনপি নেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন আজ শনিবার প্রথম আলোকে জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও শামিলা রহমান এবং নাতনিদের নিয়ে পারিবারিক আবহে মানসিকভাবে বেশ ভালো আছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক যাঁরা তাঁর সঙ্গে লন্ডন গেছেন, সেই চিকিৎসকেরা বাসায় তাঁকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। লন্ডন ক্লিনিকের অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও জেনিফার ক্রসের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। আপাতত বাসায় থেকে এভাবেই চিকিৎসা চলবে খালেদা জিয়ার।
চিকিৎসক জাহিদ হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন বাসায় রেখেই তাঁকে কিছুদিন চিকিৎসা দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, বাসায় ফেরার পর শুক্রবার রাতেই লন্ডন ক্লিনিকের মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকেরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পর্যালোচনা করেছেন। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তাঁর স্বাস্থ্যের যেসব পরীক্ষা করা হয়, এর কয়েকটি পরীক্ষার রিপোর্ট আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে। সেসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মেডিকেল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সেগুলো পর্যালোচনা করবেন।
জাহিদ হোসেন উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়ার শরীরিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসকেরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।
১৭ দিন লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসার পর ছেলে তারেক রহমান হাসপাতাল থেকে উত্তর লন্ডনের কিংসটনের বাসায় মা খালেদা জিয়াকে নিয়ে যান শুক্রবার রাতে। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান, ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান।
লন্ডনে বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকেরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তাঁর বয়স ও স্বাস্থ্যের ওপর বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।
২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসনকে একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ওই মামলায় সাজা নিয়ে তিনি দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন; কিন্তু বিএনপির নেত্রীর লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে বলে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা অনেক দিন ধরে বলে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে ২০২০ সাল থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে কয়েক দফা আবেদন করা হয়; কিন্তু সেই সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আসেন। ওই দিন লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাঁকে বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। গত ১৭ দিন তিনি সেখানেই অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডির অধীন চিকিৎসাধীন ছিলেন।