৪০ বছর পর হলেও অতি উৎসাহী পুলিশদের বিচার হবে: মির্জা আব্বাস

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে দলটি। ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর
ছবি: দীপু মালাকার

পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘অতি উৎসাহী পুলিশ ভাইয়েরা আমাদের বাধা দেন। মারতে চান। মারেন। আপনাদের ভিডিও ফুটেজ সবার কাছে কিন্তু। আপনারা মনে রাইখেন। সবার বিচার হবে। আমরা না থাকতে পারি, নতুন প্রজন্ম থাকবে। এর বিচার হবেই। ৪০ বছর পরে হলেও বিচার হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এসব কথা বলেন মির্জা আব্বাস। রাজধানীর পল্লবীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি।

রাজধানীসহ দেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আজ এই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা আগেই দিয়েছিল বিএনপি।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে মারামারির জন্য প্রস্তুত নই। আমরা মারামারি করতে চাই না। আমরা চেয়েছিলাম প্রতিবাদের মাধ্যমে জনগণের দাবিদাওয়া আদায় করতে। কিন্তু আমাদের গায়ে সরাসরি হাত তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গুলি করে আমাদের তিন ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। মোমবাতি জ্বালানোর কর্মসূচিও সরকারের সহ্য হচ্ছে না।’

প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তা করেন না দাবি করে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি তো বলেই দিলেন, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়া হবে না, মারপিট করা হবে না। আপনি বলার পর তিনটা ছেলে মারা গেল। আপনি বলার পর দেশে প্রতিটি মিছিল-মিটিংয়ে হামলা করা হলো। এটা কিসের ইঙ্গিত বহন করে। অর্থাৎ আপনি যা বলেন, তা করেন না। আর যা করেন, তা বলেন না। আপনার ওপর এ দেশের মানুষ বহু আগেই আস্থা হারিয়েছে।’

যুদ্ধক্ষেত্রে নারী ও শিশুদের ওপর হামলা না করার ধর্মীয় বিধান থাকলেও এই সরকার বাছবিচার করছে না বলে অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘আমাদের ধর্মে একটা কথা আছে, যুদ্ধক্ষেত্রে নারী ও শিশুদের ওপর আঘাত করা যাবে না। আপনারা (আওয়ামী লীগ) নারী–শিশু কিছুই ছাড়ছেন না এখন। ১৮ বছরের একটা ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলেছেন। আপনাদের অত্যাচার এখন সীমাহীন।’

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে দলটি। ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর
ছবি: দীপু মালাকার

জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও পুলিশের গুলিতে দলের তিন কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ১৬টি স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ইতিমধ্যে আটটি স্থানে এ কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। এর মধ্যে চারটিতে বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

আগামী মঙ্গলবার সবুজবাগ এলাকায় সমাবেশের অনুমতি চেয়েও এখন পর্যন্ত পাননি বলে জানান মির্জা আব্বাস। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পরশু সবুজবাগের কর্মসূচি। ওখানে আমরা সভা করব। অনুমতি দেন বা না দেন। যুদ্ধ যদি লাগে যুদ্ধ হবে, অসুবিধা নাই। আমরা সভা করবই। যেখানে খুশি সেখানে করব। আমরা এক জায়গায় সভার অনুমতি চেয়েছি, যদি না দেন তাহলে ১০০ জায়গায় সভা করব। স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, সভা বন্ধ হবে না।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে চাই। তবে বাধা যদি আসে, সেই বাধা মোকাবিলা করে কর্মসূচি পালন করা হবে।’

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, ‘সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছেন না। এটা করবেন না। এরপর বাংলাদেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।’

সরকার একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায় বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যখন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই–সংগ্রাম করছে, তখন তারা (সরকার) সন্ত্রাস, হত্যা ও সভা পণ্ড করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়; যাতে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকাটা সহজ হয়।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম। কর্মসূচিতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।

এদিকে রাজধানীতে বেলা তিনটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা একটা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই হাজারো নেতা–কর্মীর উপস্থিতির কারণে বেলা দুইটা থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক হয়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য বেলা সাড়ে তিনটার পর উত্তর পাশের সড়ক হয়ে এক সারিতে যান চলাচল শুরু হয়।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুর ১২টা থেকে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কাকরাইল মোড়ে প্রিজন ভ্যান ও জলকামান রাখা হয়। রাস্তা বন্ধ করে বিএনপির সমাবেশ কর্মসূচি করার কারণে নয়াপল্টনের আশপাশের এলাকা দৈনিক বাংলা, ফকিরাপুল, পল্টন মোড়, কাকরাইলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সমাবেশ শেষ হওয়ার ৪০ মিনিট পরে নয়াপল্টনের আশপাশের এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।