এখন থেকেই নির্বাচনে কারচুপি ও দখলের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে: মির্জা ফখরুল

গুলশানের বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে  বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

এখন থেকেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনে কারচুপি ও দখলপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘ওদের (আওয়ামী লীগের নেতাদের) বক্তৃতার মধ্যে দেখবেন একটাই জোর দিচ্ছে যে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রাখতেই হবে। অ্যাট দ্য কস্ট অব কান্ট্রি, অ্যাট দ্য কস্ট অব নেশন, অ্যাট দ্য কস্ট অব ডেমোক্রেসি।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানের বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম ওই মন্তব্য করে কথাগুলো বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ, জাতি এবং গণতন্ত্রের মূল্যে একজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী রাখতেই হবে। যে জাতি স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে, ত্যাগ করেছে, সেই জাতি এটি কীভাবে মেনে নেবে।

১৯ সেপ্টেম্বর দলের স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় বিএনপির মহাসচিব সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘শত প্ররোচনার মুখেও আমরা একেবারেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি এবং গ্রেপ্তার, মামলা, অত্যাচার-নির্যাতনের পরও আমরা আন্দোলন করছি। আমরা শেষ পর্যন্ত যাব। এটা নির্ভর করবে সরকারের ওপর। সরকারের আচরণ কী হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করবে।’

শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে জনগণের কল্যাণে সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘যত দিন আপনি থাকবেন, দেশ আরও সংঘাতের দিকে যাবে, আরও খারাপের দিকে যাবে এবং সংঘাত আরও বাড়তে থাকবে। এখনো তো সংঘাত শুরু হয়নি। জনগণ যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে জনগণ তো রুখে দাঁড়াবে—পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এটা। জনগণ লড়াই করে, যুদ্ধ করেই স্বাধীনতা এনেছে। অতীতের মতো এবারও জনগণ রুখে দাঁড়াবে।’

সরকার ক্ষমতার জন্য বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে বলে আবারও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম; যেটা অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ সেই স্তম্ভ ধ্বংসের পথে। বিচার বিভাগ হচ্ছে শেষ আশ্রয়স্থল। সংবিধানে, সংসদে কোনো সমস্যা হলে, রাষ্ট্র দ্বারা জনগণ নির্যাতিত হলে তখন বিচার বিভাগের কাছেই যাওয়া হয়। সেই জায়গা যদি দলীয়করণ হয়, নিরপেক্ষ না থাকে, তাহলে একটা রাষ্ট্র টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ প্রশ্নটা শুধু গণতন্ত্রের নয়, প্রশ্ন হচ্ছে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের। এরা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করছে, যে করেই হোক ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে। যেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল গতকাল ঠাকুরগাঁওয়ে ৩১ নেতা–কর্মীকে জেলে পাঠানোর ঘটনার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এখন কথায় কথায় বিচার বিভাগ জামিন বাতিল করে দিচ্ছে। কালকে ঠাকুরগাঁওয়ে ৩১ জনকে জজকোর্ট জেলে পাঠিয়েছেন। কেন? তারা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে। নিম্ন আদালত তাদের অস্থায়ী জামিন দিয়েছে। দু–তিনটি তারিখ যাওয়ার পর গতকাল যখন তারা স্থায়ী জামিনের জন্য গেছে, তখন সেটাকে বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়েছে। অথচ তারা জামিনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করেনি।’

ফখরুল বলেন, ‘এটাই সারা দেশে হচ্ছে, ঢাকায়ও হচ্ছে। বিষয়টি অ্যালার্মিং। উচ্চ আদালতও আজকে সব সময় নিরপেক্ষ থাকতে পারছেন না। যার কারণে এ ঘটনাগুলো ঘটছে।’

আ.লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনই সম্ভব নয়

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সম্প্রতি ঢাকা সফর করে যাওয়া ইইউর প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশের ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলটি ইইউতে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলেছে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই।

এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলে আসছি একটা কথা যে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনই সম্ভব নয়। এটা তো পরীক্ষিত। আমরা পরপর দুটো (২০১৪–২০১৮) নির্বাচন তাদের অধীনে করেছি। তাদের অধীনে যে কোনো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না, জনগণ যে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে না, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ কারোরই থাকার কথা নয়।’

বর্তমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর কোনো পরিবেশ নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলটির বাংলাদেশে আসার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরপরও এবার যখন প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা দিয়েছিলেন। বিদেশিদের কাছে গেলেই তিনি কথা দেন যে খুব সুন্দর, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে। কোনো চিন্তার কারণ নেই। তখন ইইউ একটা প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েছে। তারা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছে। কথা বলে তারা পরিষ্কার করে বলেছে, এখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই জিনিস বারবার বলে তো কোনো লাভ হচ্ছে না। কারণ, ওরা (সরকার) কানে তুলো দিয়েছে।’

প্রসঙ্গ মেয়র তাপস: তাঁদের কথাবার্তায় সন্ত্রাসের ব্যাপার আছে
গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলামকে ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা (হুমকি) হচ্ছে তাঁদের মানসিকতা কোথায়, তাঁদের কথার মধ্যে প্রকাশ পায়। আমি বারবার একটা কথা বলি যে তাঁদের চরিত্র, তাঁদের কথাবার্তা বলা—সবকিছুর মধ্যে প্রচণ্ড একটা সন্ত্রাসের ব্যাপার আছে, জমিদারি ভাব আছে। এটা হচ্ছে তাঁদের জমিদারি, এ জন্য কাকে তাঁরা ঢুকতে দেবেন কি দেবেন না, এ ধরনের কথা বলেন।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা এটাকে (এ ধরনের বক্তব্যকে) খুব গুরুত্ব দিই না। গুরুত্ব দিই না যে আমরা বহু ফেস করেছি অতীতে। এগুলো নিয়ে আমরা চিন্তা করি না। কে কী বলল না বলল, তাতে বাংলাদেশের জনগণের কিছু যায় আসে না। জনগণের লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশের একটা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তারা চায়।’

বাংলাদেশ পরাশক্তির দেশগুলোর শীতল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এখানে পরাশক্তির ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড’ তৈরি করার একটা ক্ষেত্র সৃষ্টির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি সরকারকে সেদিকে না যাওয়ার আহ্বান জানান।

বিভিন্ন মামলায় বিএনপির নেতাদের সাজা হচ্ছে। প্রায় ৫০০ নেতা সাজার তালিকায় রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। নেতাদের কারাদণ্ড হলে বিএনপির বিকল্প পরিকল্পনা কী—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বরেন, ‘আমাদের প্ল্যান তো আছেই। মামলা–মোকদ্দমা নিয়ে চলছি ১৫ বছর ধরে। আমাদের কোনোরকমে দমাতে পেরেছে? পারেনি। জনগণকেও দমাতে পারছে না। মামলা–মোকদ্দমা দিয়ে এ আন্দোলনকে স্তিমিত করা যাবে না।’