আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় সম্মেলনে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি বাড়ছে না। আগামী তিন বছরের জন্য কমিটি ৮১ সদস্যেরই হবে। তবে কমিটিতে সমন্বয় করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের একটি ও সাংগঠনিক সম্পাদকের দুটি পদ সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা আছে। দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন বসছে আগামী ২৪ ডিসেম্বর। এর মধ্যে পদ্মা ও মেঘনা নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি; যদিও তা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়নি। এর বাইরে ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার সর্বোচ্চ বয়স ২৮ বছর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ফলে, সংগঠনটি থেকেও অনেক নেতা বের হচ্ছেন; যাঁদের বেশির ভাগই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে আসতে তৎপর। কিন্তু জায়গা না পেয়ে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকীয় পদের উপকমিটিগুলোয় স্থান পেতে জোর তৎপরতা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের।
জাতীয় সম্মেলনে দলের নতুন গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র অনুমোদন করা হবে। ইতিমধ্যে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র হালনাগাদ করতে উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠনতন্ত্র হালনাগাদে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে একটি উপকমিটি। আজ শনিবার এ কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। এতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির বর্তমান কমিটি ৫০১ সদস্যের। সে তুলনায় আওয়ামী লীগের কমিটির আকার বেশ ছোটই। এ বিষয়ে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপির মতো জাম্বুজেট মার্কা কমিটি আওয়ামী লীগ করবে না।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মোটামুটি চূড়ান্ত। তবে পদ্মা ও মেঘনা নামে দুটি নতুন বিভাগের জন্য সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে দেশের আট বিভাগের জন্য আটজন সাংগঠনিক সম্পাদক আছেন। প্রতি দুই বিভাগের দায়িত্বে আছেন একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। নতুন দুটি বিভাগের জন্য স্বাভাবিকভাবেই দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক ও একটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ সৃষ্টির প্রয়োজন পড়বে। এ জন্য বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ৮১ সদস্যের কমিটি ঠিক রেখে তিনটি পদ কীভাবে বাড়ানো হবে, সে বিষয় সামনে আসছে।
গঠনতন্ত্র উপকমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। ওই বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। আরও বেশ কিছু বৈঠক হবে। তিনি জানান, সাংগঠনিক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের তিনটি পদ বাড়ানো হলে নির্বাহী সদস্য কমানো হতে পারে। বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকের কিছু পদ কমিয়ে একীভূত করার সম্ভাবনাও আছে। এমনকি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদও কমতে পারে।
বিএনপির বর্তমান কমিটি ৫০১ সদস্যের। সে তুলনায় আওয়ামী লীগের কমিটির আকার বেশ ছোটই। এ বিষয়ে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিএনপির মতো জাম্বুজেট মার্কা কমিটি আওয়ামী লীগ করবে না।’
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসংখ্যা ১৯। তাঁদের মধ্যে বর্তমান কমিটির সাজেদা চৌধুরী, মো. নাসিম, সাহারা খাতুন ও আবদুল মতিন খসরু মারা গেছেন। আগে থেকে দুটি পদ ফাঁকা ছিল। সব মিলিয়ে ছয়টি পদ ফাঁকা আছে। এর মধ্যে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী ও কামরুল ইসলামকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে। সভাপতিমণ্ডলীতে এখনো তিনটি পদ ফাঁকা।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীতে পদসংখ্যা ৩৪। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্যের পদ ২৮টি। তাঁদের মধ্যেও কেউ কেউ মারা গেছেন।
এবার ক্ষমতাসীন দল তাদের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র প্রণয়নে তৃণমূলের নেতা, সুশীল সমাজ, শুভাকাঙ্ক্ষীদের মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে দলের তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে চিঠি দিয়ে মতামত চাওয়া হতে পারে। আর সর্বসাধারণের মতামত পেতে খসড়া গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। সেখানে যেসব মতামত আসবে, তা থেকে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।
গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র উপকমিটির আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক আজ সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে পুরোনো, ঐতিহ্যবাহী ও বড় দল। এই দলের জন্য আধুনিক ও যুগোপযোগী একটি গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দলের নেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মতামত নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র কড়াকড়িভাবে অনুসরণ করে থাকে। তাই এটি প্রণয়নে তাঁরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই থাকছেন—এটি নিশ্চিত। মূল আকর্ষণ সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন। ওবায়দুল কাদের পরপর দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক। তিনি আবারও হবেন, নাকি নতুন কেউ এই পদে আসছেন—এ নিয়ে দলের ভেতর আলোচনা চলছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ সম্পাদক আকর্ষণীয় পদ। এর জন্য হয়তো পাঁচ থেকে সাতজন নেতা দৌড়ঝাঁপ করেন। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো একটা পদে যাওয়ার জন্য কয়েক হাজার নেতা অপেক্ষায় থাকেন। কোনো নেতা প্রয়াত হলে কিংবা বাদ পড়লে অন্যদের সুযোগ হয়। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি বাড়লে আরও অনেক নেতার জন্য সুযোগ তৈরি হতো।
২০১৬ সালের জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসংখ্যা করা হয় ৮১। এর আগে দীর্ঘদিন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি ছিল ৭৩ সদস্যের। বিএনপিও ওই বছরের আগস্টে ৫০১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে। এরপরই আওয়ামী লীগের কমিটির পরিধি বাড়ানোর দাবি জোরালো হয়।