বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাঁচতে দেবে না সরকার

গুলশানের একটি হোটেলে ‘বেগম খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকা, ২৬ মে
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি একটা বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, এই বক্তব্য এসেছে খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে লেখা বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে। এতে বক্তারা বলেছেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমান ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোনো অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে দেবে না বর্তমান সরকার। তাঁদের অস্তিত্ব বহনকারী বিএনপির নেতা–কর্মীদেরও বাঁচতে দেবে না এই সরকার, যদি তারা (সরকার) বারবার ক্ষমতায় থাকে।

‘বেগম খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় আজ রোববার। ঢাকায় গুলশানের একটি হোটেলে এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন লেখক, শিক্ষাবিদ এবং যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা। ‘বেগম খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’  শিরোনামে বইটি ইংরেজিতে লেখেন প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। সেটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন শাহরিয়ার সুলতান। বাংলায় অনুবাদ করা বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান ছিল আজ।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দলের নেতাদের বক্তব্য মূলত ছিল সরকারের সমালোচনা। সরকারের উদ্দেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কেউ কেউ এ রকম করে বলেন, যত দিন জীবিত আছি, কেউ নড়াতে পারবে না। আর এখন দেখছি, নিজে থেকেই নড়ছে। কারণ, তিনটি (সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সাবেক দুই প্রধান আজিজ আহমেদ ও বেনজীর আহমেদকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ, বর্তমান একজন সংসদ সদস্যের হত্যাকাণ্ড) এমন এমন ঘটনা ঘটেছে, এসবের দায় সরকারকেই নিতে হবে।’

সরকার বিএনপি নেতা–কর্মীদের বাঁচতে দেবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘এই সরকার জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার কোনো রকম অস্তিত্ব বাংলাদেশে টিকিয়ে রাখতে দেবে না এবং চায় না। আমরা জিয়াউর রহমানের অস্তিত্ব বহন করি। আমাদের কাউকে বাঁচতে দেবে না, যদি এই সরকার বারবার ক্ষমতায় থাকে।’

বিএনপি একটা বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে আছে উল্লেখ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের আরও অনেক কিছু করার বাকি। তার মধ্যেও যতটুকু সম্ভব, যা কিছু করা প্রয়োজন, তার সব করার চেষ্টা করব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপির গবেষণা বিভাগ নেই, যার কারণে ক্ষমতাসীনেরা অপপ্রচার চালালে তার যথার্থ জবাব দিতে পারে না বিএনপি। খালেদা জিয়ার সাজার রায়ে যে ধরনের দুর্বলতা রয়েছে, সেসব নিয়েও গবেষণা নেই।

খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে লেখা বইটির ইংরেজি থেকে অনুবাদ করতে ছয় বছর সময় লেগেছে, এর সমালোচনা করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, বিরোধী দলের অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজ যোগ দিতে চান না।

আসিফ নজরুলের পরেই বক্তব্য দিতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘কেউ আসতে চায় না—এ কথা অত্যন্ত সত্য। আসিফ নজরুল যতটা সাহসের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, আমি ততটা বলতে সাহস করি না। বলি, কিন্তু ভয় পাই।’

এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার প্রতি চরম নিষ্ঠুরতা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সরকার যা করেনি, তা এই সরকার করছে। যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করেছে, তাদের প্রতি ব্রিটিশরা এত নিষ্ঠুর হয়নি। অসুস্থ হলে অভিযুক্তকে মুক্তি দিত ব্রিটিশ সরকার।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারসহ বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।

কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ইতি প্রকাশনের প্রকাশক মো. জহির দিপ্তি প্রমুখ।