বিএনপি নেতা-কর্মীদের হতাশা কাটাতে রমজান মাসজুড়ে কর্মসূচি

বিএনপি

মামলার ভারে ক্লান্ত ও কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের হতাশা কাটিয়ে সক্রিয় রাখতে রমজান মাসজুড়ে কর্মসূচি নিচ্ছে বিএনপি। দলটি এই কর্মসূচিতে মূলত ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবে কেন্দ্র থেকে মহানগর, জেলা, উপজেলাসহ ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত। বিএনপির নেতারা বলছেন, এর মূল লক্ষ্য মাঠের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়ে তাঁদের সক্রিয় রাখা।

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের মহাসচিবসহ সারা দেশে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে কারাবন্দী করা হয়। এখন নেতা-কর্মীরা ধীরে ধীরে মুক্তি পাচ্ছেন। কিন্তু সরকারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর দলের অনেকের মধ্যে হতাশা ভর করেছে। আবার এই মুহূর্তে মাঠের কর্মসূচিও সেভাবে নেই।

এমন পটভূমিতে এবারের রমজানে সারা দেশে ইফতার মাহফিলের কর্মসূচি ঘিরে আন্দোলনে সক্রিয় এবং কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে চায় বিএনপি। একই সঙ্গে রমজানে সব সাংগঠনিক ইউনিটে যথাসম্ভব গরিব-অসহায় মানুষের মধ্যে ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এর মাধ্যমে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেয়নি, এই জনগোষ্ঠীর সঙ্গেও একটা সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা থাকবে তাদের।

আমাদের নেতা-কর্মীরা মানসিকভাবে শক্ত আছে। কারণ তারা জানে, দেশের ৯৫ শতাংশ জনগণ বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। যারা ক্ষমতা দখল করেছে, সেটা রাজনীতির বাইরের অরাজনৈতিক প্রক্রিয়া। রাজনীতিতে বিএনপিরই জয় হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের ভার্চ্যুয়াল সভায় রমজান মাসের কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অংশ নেন। সেখানে এবারের ইফতার অনুষ্ঠানে কারাবন্দী এবং গুম-খুন হওয়া নেতা-কর্মীদের পরিবার ও সদ্য কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তাবও দেন নেতারা। পরে দলের নেতারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এর অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানিসহ সব পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ শনিবার সারা দেশে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

তবে সভায় অংশ নেওয়া ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রথম আলোকে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইফতার অনুষ্ঠান আড়ম্বরপূর্ণ না করার কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি গরিব ও অসহায় মানুষদের বেশি করে ইফতারি এবং খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গত কয়েক বছর টানা আন্দোলন করেছে বিএনপি। এরপর সরকার হটানোর ‘এক দফার’ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বর্জন করে।

বিএনপির অন্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় বিএনপি একাধিক ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে। এর মধ্যে এতিম এবং উলামা মাশায়েখদের নিয়ে, পেশাজীবী, কূটনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে পৃথক ইফতার আয়োজনের কথা রয়েছে। এসব ইফতারে আমন্ত্রিতদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরের সব থানায় ইফতারের আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতারের আয়োজন করবে।

আরও পড়ুন

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গত কয়েক বছর টানা আন্দোলন করেছে বিএনপি। এরপর সরকার হটানোর ‘এক দফার’ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বর্জন করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলের আন্দোলন উপেক্ষা করেই গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে আবার ক্ষমতাসীন হয়েছে। এই পরিস্থিতি বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনেকের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করেছে।

অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা মানসিকভাবে শক্ত আছে। কারণ তারা জানে, দেশের ৯৫ শতাংশ জনগণ বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। যারা ক্ষমতা দখল করেছে, সেটা রাজনীতির বাইরের অরাজনৈতিক প্রক্রিয়া। রাজনীতিতে বিএনপিরই জয় হয়েছে।’

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, এখন কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিগত আন্দোলনে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও একধরনের জড়তা দেখা দিয়েছে। আগামী দিনের কর্মসূচিতে সবার অংশগ্রহণ কতটা স্বতঃস্ফূর্ত হয়, তা নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।

বিএনপির নেতাদের দাবি, একতরফাভাবে এই নির্বাচন করার লক্ষ্যে সরকার সারা দেশে দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে। মূলত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশের কর্মসূচিকে ঘিরে এই গ্রেপ্তার শুরু হয়। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে সহিংসতা ও সংঘর্ষের জেরে সারা দেশে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনের আগপর্যন্ত ২৭ হাজার ৫১৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময়ে ২৮ জন নেতা-কর্মীর মৃত্যু হয়। আহত হন ৯ হাজার ৭০৪ জন। ভোটের পর নেতা-কর্মীরা মুক্তি পেতে শুরু করেন। যদিও বিএনপির দেওয়া এই পরিসংখ্যান মানতে রাজি নয় সরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময় বলেছেন, নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১২ হাজারের মতো হতে পারে।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, এখন কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিগত আন্দোলনে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও একধরনের জড়তা দেখা দিয়েছে। আগামী দিনের কর্মসূচিতে সবার অংশগ্রহণ কতটা স্বতঃস্ফূর্ত হয়, তা নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতি এড়াতে নীতিনির্ধারণী নেতারা রোজায় ইফতার মাহফিলের পাশাপাশি ইফতার-পূর্ব আলোচনা, কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনার অনুষ্ঠান আয়োজনে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, এর মাধ্যমে নির্বাচন-পরবর্তী ঝিমিয়ে পড়া নেতা-কর্মীদের সক্রিয় রাখার পাশাপাশি আস্থা ফেরানো সম্ভব হবে।