এক মাসে ৮৩৭টির বেশি মামলায় ২০ হাজার ৩২৬ জনকে গ্রেপ্তার

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে বুধবার ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার আইনজীবীসহ সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে’ সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারাছবি: সংগৃহীত

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর এ পর্যন্ত ৮৩৭টির বেশি মামলায় ২০ হাজার ৩২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার আইনজীবীসহ সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে’ ফোরাম এ সংবাদ সম্মেলন করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশব্যাপী বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর করা হচ্ছে। এমনকি গভীর রাতে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়িঘরে প্রবেশ করে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, সিনিয়র সহসভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সহসভাপতি এম বদরুদ্দোজা, যুগ্ম মহাসচিব মো. রুহুল কুদ্দুস, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে কায়সার কামাল বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর মহাসমাবেশে সরকার ও সরকারি দলের পরিকল্পিত সহিংসতা ও নাশকতার নজিরবিহীন দুঃখজনক ঘটনাবলির পর এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ৮৩৭টির বেশি হয়রানিমূলক গায়েবি মামলায় ২০ হাজার ৩২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে বিরোধীদলীয় ৭৩ হাজার ১২৩ নেতা–কর্মীকে। আহত হয়েছেন ৮ হাজার ২৪৯ জনের বেশি নেতা–কর্মী। আর ৩৫টি মামলায় ৩ তিন মাসে ৬৩৬ নেতা–কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর ৫০ লাখের বেশি নেতা–কর্মী ও সমর্থককে আসামি করা হয়েছে।’

বিরোধী দল তথা জনগণের ন্যায্য আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে সরকার বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলা হয়, সাধারণ মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। তারা হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক ‘মিথ্যা গায়েবি মামলাকে’ বিরোধী দল দমনের প্রধান অবলম্বনে পরিণত করেছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও হয়রানি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না দেশের আইনজীবী সমাজও। আইনজীবীদের নজিরবিহীনভাবে আদালত প্রাঙ্গণ ও চেম্বার থেকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে জেলহাজাতে থাকা কয়েকজন আইনজীবীর নাম, কারাভোগের পর কয়েকজন আইনজীবীর জামিনে মুক্তি ও কয়েকজন আইনজীবীকে সাজা দেওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলা হয়, জামিনপ্রাপ্তির সব বৈধ কারণ থাকলেও আইনজীবীসহ কারাবন্দি রাজনৈতিক কর্মীদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল বলেন, ‘আমরা আইনজীবী সমাজ বর্তমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান সংগ্রামে অংশ নেওয়া বিরোধী দল, বিরোধী মত ও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপর সরকারের জঘন্যতম ও নজিরবিহীন নিপীড়ন বন্ধ করে গ্রেপ্তার করা সব আইনজীবীর মুক্তি দাবি করছি। আইনজীবী সমাজের বিরুদ্ধে করা সব রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে আমরা চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গ্রেপ্তার করা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর; মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদসহ সব রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি ও সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’