বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা ভোটেও হারলেন

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ২২ নম্বর দুলুখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের চিত্র। গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকেছবি: প্রথম আলো

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বহিষ্কৃত নেতারা ভোটে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের তেমন সহযোগিতা পাননি। ফলে এই প্রার্থীরা আশানুরূপ ফল পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যে ২৮টি উপজেলায় বিএনপির (বহিষ্কৃত) নেতারা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন, তার অধিকাংশতেই তাঁরা পরাজিত হয়েছেন। মাত্র ৭ জন জয়ী হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বেসরকারি ফলাফলে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ইমান আলী বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। এই উপজেলায় বিএনপির আরও দুই নেতা সেকান্দার আলী ও তাজমিন নাহারও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন। তাঁরাও হেরে গেছেন। সেকান্দার আলী উপজেলা বিএনপির সদস্য ও তাজমিন নাহার জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সহসভাপতি ছিলেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তিনজনকেই দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

নির্বাচনের আগে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যাঁরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের সহযোগিতা করার প্রশ্নই আসে না। দলের যাঁরা সহযোগিতা করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি জানিয়েছিলেন।

সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সাত প্রার্থীর বিপরীতে নির্বাচন করেন বিএনপির বহিষ্কৃত দুই নেতা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুজনই পরাজিত হয়েছেন। এর মধ্যে শাল্লায় আওয়ামী লীগের অবনি মোহন দাসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে সক্ষম হন বিএনপির গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি অবনি শাল্লা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। আর উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি গনেন্দ্র চন্দ্র সরকারও পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।

একইভাবে দিরাই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেতে পারেননি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) গোলাপ মিয়া। সেখানে প্রদীপ রায়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায়ের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহের ফুলপুর ও ধোবাউড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপির দুই প্রার্থীই হেরেছেন। ফুলপুরে পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান, ধোবাউড়ায় বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শামসুর রশিদ প্রার্থী হয়েছিলেন।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলায় আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থীর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও চেয়ারম্যান হতে পারেননি উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফায়জুল কবির তালুকদার। এই উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক বেশি বলে মনে করা হয়। ২০০৯ সালে উপজেলার প্রথম নির্বাচনে ফায়জুল কবিরের ভাই ইকরামুল কবির তালুকদার চেয়ারম্যান হন। ২০১৪ সালে চেয়ারম্যান হন জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী। ২০১৯ ও চলতি ২০২৪ সালে বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচন বর্জন করে।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে হেরেছেন উপজেলা যুবদলের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুর রহমান। এ ছাড়া জেলার সিঙ্গাইর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন ও আফরোজা রহমানও পরাজিত হয়েছেন। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে হেরেছেন সারোয়ার হোসেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরেও পরাজিত হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ওমরাহ খান। কুমিল্লার মেঘনায় আলোচিত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সভাপতি রমিজ উদ্দিন লন্ডনী তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে হেরে গেছেন। ফরিদপুর সদরে বিএনপির বহিষ্কৃত দুই নেতা রউফ উন নবী ও এ কে এম নাজমুল ইসলাম চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন। ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে রউফ চতুর্থ ও নাজমুল ষষ্ঠ হয়েছেন।

উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে গতকাল বুধবার ১৩৯টি উপজেলায় ভোট হয়। এ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির ৭৫ জন নেতা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নেন। ভোটের আগেই তাঁদের বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বিএনপি দলের নেতাদের বহিষ্কার করেই ক্ষান্ত হয়নি, দলটি জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে প্রচারপত্র বিতরণ করেছে।

গতকাল দুপুরেই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগের প্রতারণার ফাঁদে পা না দিয়ে দেশের ভোটাররা উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন।