বর্তমান সংবিধান আওয়ামী লীগের সুই দিয়ে সেলাই করা: রিজভী

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সংবিধান আওয়ামী লীগের সুই দিয়ে সেলাই করা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, এই সংবিধানে জনগণের রায় প্রতিফলিত হবে না। এ কারণেই নির্বাচনের সময় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দরকার।

লক্ষ্মীপুরে কৃষক দলের কর্মী সজীব হোসেন হত্যার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক শোকমিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। সমাবেশে তিনি প্রধান বক্তা ছিলেন। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু ছিলেন প্রধান অতিথি।

বরকতউল্লাহ বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত বছরের ২৪ আগস্ট থেকে আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ১৯ জন নেতা জীবন দিয়েছেন। হাজারো নেতা-কর্মী পঙ্গু হয়েছেন। ২০ হাজার নেতা-কর্মী জেলে গেছেন। গত দুই দিনে আট হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আবার নতুন করে মামলা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।

এই মামলাগুলোয় অতি দ্রুত সাজা দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ শাখা খোলা হয়েছে উল্লেখ করে বরকতউল্লাহ বলেন, তারপরও বাংলাদেশের মানুষ বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ৩৬টি রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল আজ ঐক্যবদ্ধ। মানুষ ঐক্যবদ্ধ। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো নির্বাচন হবে না।

‘সজীবকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে’

লক্ষ্মীপুরে শহরের ঝুমুর সিনেমা হল ও রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে গত মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ ও বিএনপি নেতা–কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এ সময় নিহত হন সজীব হোসেন (৩০)।

এ নিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সজীব হোসেনকে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, এ ব্যাপারে কোনো দ্বিধা নেই। প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটেছে এ ঘটনা। সবাই দেখেছে কারা হত্যা করেছে। ওই দিন বিএনপির কর্মসূচি বানচাল করার জন্য, রক্তাক্ত করার জন্য, আওয়ামী যে কর্মসূচি, তার সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ সজীব হোসেনকে হত্যা।’

রিজভী বলেন, ‘যার কারণে ওবায়দুল কাদেররা বলেন, সংবিধানে বাইরে যাব না। আমরা মোগল রাজত্বের কথা শুনেছি, সুলতানি আমলের কথা শুনেছি, আমরা পাল বংশের কথা শুনেছি, সেন বংশের কথা শুনেছি, এখন শেখ রাজত্ব কায়েম করার জন্য তারা বিরোধী দল শূন্য করতে চায়। আর এই কারণেই ওবায়দুল কাদেররা বলেন সংবিধানের বাইরে নির্বাচন হবে না।’

এই সংবিধান কার—এমন প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, ‘এই সংবিধান তো আওয়ামী লীগের সুই দিয়ে সেলাই করা সংবিধান। আওয়ামী লীগের সুই দিয়ে সেলাই করা এই সংবিধানে জনগণের রায় প্রতিফলিত হবে না। এ কারণেই নির্বাচনকালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দরকার। আজকে হাট–ঘাট, পথে–প্রান্তরে জনগণের এক আওয়াজ, শেখ হাসিনার পদত্যাগ, আর নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার।’

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন প্রমুখ।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি শোকমিছিল বের হয়। সেটি নাইটিঙ্গেল, কাকরাইল মোড় ঘুরে আবার নাইটিঙ্গেল, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল মোড় হয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।