প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ছাত্র অধিকারের কর্মসূচি শুরু হওয়ার মিনিট দুয়েকের মধ্যেই  ক্রিকেট খেলা রেখে মোটরসাইকেলে করে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে হাজির হন সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুন্সি রাকিব হাসান, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন ওরফে জিহাদ, বিজয় একাত্তর হল শাখার সহসভাপতি আল আমিন ইসলাম ওরফে মুন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সহসম্পাদক নূর উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানের অনুসারী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্র অধিকারের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা রাজু ভাস্কর্যে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেলে বসেই পরিষদের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ করতে থাকেন। সেইসঙ্গে কেন তাঁরা মিথ্যা ও গুজব ছড়াচ্ছেন, বারবার সেই প্রশ্ন করতে থাকেন। তবে বিন ইয়ামিন বক্তব্য চালিয়ে যান।

ডাকসু ভবনের সামনে ছাত্র অধিকারের অবস্থান কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল আজ বিকেল তিনটায়। কিন্তু কর্মসূচির আগেই সেখানে ট্যাম্প ও টেনিস বল নিয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী।

একপর্যায়ে মোটরসাইকেল থেকে নেমে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন ছাত্রলীগ নেতা মুন্সি রাকিব হাসান ও ইমাম হোসেন। রাকিব সাংবাদিকদের ‘জাতির বিবেকের প্রতিচ্ছবি’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আপনারা কেন তাদের (ছাত্র অধিকার) মিথ্যাচারের বিষয়ে প্রশ্ন করছেন না?’ ইমাম হোসেন ছাত্র অধিকারের নেতা-কর্মীদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘এরা শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এসেছে; প্রত্যেকটার সঙ্গে শিবিরের সম্পৃক্ততা আছে।’

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ ছাত্র অধিকারের এ কর্মসূচিকে নাটক বলেও আখ্যা দেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অব্যাহত ‘প্রশ্ন’ ও ঠাট্টা–বিদ্রূপের মধ্যেই বক্তব্য দিতে থাকেন বিন ইয়ামিন।

ছাত্র অধিকারের সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ডাকসু ভবনের সামনে আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে স্ট্যাম্প ও ব্যাটের মতো অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়ে জায়গাটি দখল করেছেন। এতে প্রমাণিত হয়, ছাত্রলীগ ডাকসু নির্বাচন চায় না। সন্ত্রাস ও লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির অবসানের জন্য আমরা অবিলম্বে ডাকসুসহ সব ছাত্র সংসদের নির্বাচন চাই।’

বিন ইয়ামিনের পর বক্তব্য দেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও ছাত্র অধিকারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আখতার হোসেন। তাঁর বক্তব্য শুরু হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে সরে গিয়ে রাস্তার উল্টো পাশে অবস্থান নেন। সেখানে ছাত্রলীগের আরও নেতা-কর্মী আগে থেকেই জড়ো হন। আখতার তাঁর বক্তব্যে অবিলম্বে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন দাবি করেন।

আখতারের বক্তব্যের পর ছাত্র অধিকারের নেতারা কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করে টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে চলে যান। ছাত্র অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুসরাত তাবাসসুম প্রমুখ কর্মসূচিতে অংশ নেন।