২০১৯ সালে জাপার কাউন্সিলের নথিপত্র মহাসচিব হিসেবে মসিউর রহমান নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছিলেন জানিয়ে আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, মামলার বাদী মসিউর রহমান আদালতে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেননি। বরং ভুল তথ্য দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করেছেন। ফলে তিনি কোনো আইনি প্রতিকার পেতে পারেন না।
তবে সংসদ সদস্য মসিউর রহমানের আইনজীবী আবদুল বারেক চৌধুরী আদালতকে বলেন, দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করার বিধান আছে। কিন্তু মামলার বিবাদী জি এম কাদের নিয়মের তোয়াক্কা না করেই দলের গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনেন। তাই যথাযথ নিয়ম মেনেই জি এম কাদেরকে বিবাদী করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় যে দাবি আনা হয়েছে, তা সাক্ষ্যপ্রমাণে প্রমাণিত হবে। এ মুহূর্তে মামলা খারিজের আইনগত কোনো সুযোগ নেই।
মসিউর রহমানের অপর আইনজীবী সুধীর সরকার আদালতকে বলেন, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউকে বহিষ্কার করতে হলে দলের কাছে অভিযোগ থাকতে হয়। কিন্তু কোনো ধরনের অভিযোগ না জানিয়ে মসিউর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়েছে; যা বেআইনি। এ মামলায় ইস্যু গঠন হবে, সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বিচার হবে। তাই এ মুহূর্তে মামলা খারিজের আবেদন খারিজ হবে।
উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত দুই পক্ষের আইনজীবীকে বলেন, উচ্চ আদালতে যেহেতু ১৫ জানুয়ারি এ মামলার বিষয়ে আদেশের দিন ঠিক রয়েছে, তাই মামলা খারিজের আবেদন বিষয়ে আদেশ ১৫ জানুয়ারির পর হবে।
জাতীয় পার্টির নেতা জিয়াউল হক গত বছরের ৪ অক্টোবর জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে অবৈধ ঘোষণার ডিক্রি চেয়ে প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। একই মামলায় দল থেকে জিয়াউল হকের বহিষ্কারাদেশকে বেআইনি ঘোষণা এবং দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০-এর উপধারা ১ (১) অবৈধ ঘোষণা চাওয়া হয়। এর আগে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর জিয়াউল হককে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
একই আদালতে আরেক মামলায় চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরকে বেআইনি ঘোষণার ডিক্রি চেয়েছেন দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া আরেক নেতা মসিউর রহমান। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর অব্যাহতি পাওয়া মসিউর রহমান ওই বছরের ২৩ অক্টোবর মামলাটি করেন।
জিয়াউল হকের মামলায় গত বছরের ৩০ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দলীয় কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছিলেন। ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ঢাকার জেলা জজ আদালতে বিবিধ আপিল আবেদন করেন জি এম কাদের। গত ৯ জানুয়ারি ওই আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি আদেশের দিন ঠিক করেছেন আদালত।
মামলায় জিয়াউল হক ও মসিউর রহমান দুজনই দাবি করেন, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যান। এর ছয় মাস আগে ওই বছরের ১ জানুয়ারি জি এম কাদের তাঁর বড় ভাই এরশাদকে ভুল বুঝিয়ে ‘জাতীয় পার্টির জন্য ভবিষ্যৎ নির্দেশনা’শিরোনামে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করান। এরপর জি এম কাদের প্রথমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও পরে চেয়ারম্যান হন, যা ছিল গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে এরশাদ ২০১৯ সালের ২২ মার্চ জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেন।
এরপর ৪ মে পুনরায় তাঁকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন এরশাদ। তখন এরশাদ গুরুতর অসুস্থ থাকায় তিনি স্বাভাবিক বিবেচনা প্রয়োগে সক্ষম ছিলেন না বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে। এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন জি এম কাদের। দলের গঠনতন্ত্রে এভাবে চেয়ারম্যান ঘোষণার কোনো বিধান নেই।
মামলায় মসিউর রহমান দাবি করেন, জি এম কাদের নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান দাবি করে ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলন ডাকেন। এর আগে এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ১৯ ডিসেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা কেন বেআইনি হবে না, জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট। এটি বিচারাধীন অবস্থায় দলের কাউন্সিল করেন জি এম কাদের। ওই সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন না।