আপনি ঢাকা-৮ আসনে প্রথম নির্বাচন করছেন। কোনো চ্যালেঞ্জ কি পাচ্ছেন?
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: ঢাকায় ভোট করা আমার জন্য একটা নতুন অভিজ্ঞতা। এখানে নির্বাচন করার পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। দল সুযোগ দিয়েছে, আমি দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি। দলের সিদ্ধান্ত জানার পরই যতটা সম্ভব প্রতিটি বাড়ি, মানুষের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য ঠিক করি। এখন সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছি। সাড়াও পাচ্ছি ভালো।
ঢাকা-৮ আসনে আপনি ছাড়া আরও নয়জন প্রার্থী আছেন। কিন্তু কারও প্রচার এতটা চোখে পড়ে না। আপনার কি আসলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আছে?
নাছিম: বাকি নয়জনকেই আমি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছি। কাউকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। চূড়ান্ত ফলাফল না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়েই মানুষের কাছে ছুটছি।
বিএনপিসহ বিরোধী দলের বর্জনের কারণে ঢাকার বাইরে অনেক আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বাইরে এক বা একাধিক নেতাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আপনার আসনে বা ঢাকায় সেটা কম। তাহলে কি এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমে গেল?
নাছিম: নির্বাচনে প্রতিযোগী যেহেতু আছে, কম আর বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সবাই জেতার জন্য নেমেছে। কেউ হারার কথা মাথায় নিয়ে আসেনি। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না—এটা মনে হয় ঠিক নয়। তবে আমার কাছে আরেকটি মূল বিষয় হচ্ছে ভোটারদের কেন্দ্রে আনা।
বিএনপিবিহীন ভোটে অনেকেরই ধারণা কে জিতবে—এটা এখনই পরিষ্কার। এই পরিস্থিতিতে ভোটার আনবেন কীভাবে?
নাছিম: ঢাকায় ভোটারদের কেন্দ্রে আসার প্রবণতা একটু কম। এটা বিবেচনায় নিয়ে আমরা ভোট চাওয়া এবং কেন্দ্রে ভোটার আনার কাজকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। আগে বলতাম, ভাই ভোটটা দেবেন। এখন আমরা বলি ভোটকেন্দ্রে দয়া করে আসবেন। এ ছাড়া দলের সব স্তরেই কমিটি আছে। তারা ভোটার আনার কাজ করবে। অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও তাঁদের সাধ্যমতো ভোটার আনবেন।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের একটা তৎপরতা ছিল, আছে। ভোটের গ্রহণযোগ্যতা কীভাবে আসবে?
নাছিম: ৭ জানুয়ারির ভোটের পর পশ্চিমারা তাদের সব চিন্তা, প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবে। তারা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায়। আওয়ামী লীগের চাওয়াও একই। জনগণ নিঃশঙ্কচিত্তে ভোট দিতে পারবে। নির্বাচন কমিশন সেভাবেই কাজ করছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ভোট করবে। এটুকু বলতে পারি, ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে। যারা নির্বাচনে আসেনি, তাদের নিয়ে জনগণের কোনো ভাবনা নেই। এখন সবার ভাবনা নির্বাচন নিয়েই। মানুষ হিসাব কষছে, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ১৪ দল কে কত আসন পাবে—এসব নিয়ে।
বিএনপিসহ বিরোধী দল এখনো আন্দোলনে আছে। এই পরিস্থিতিতে ভোট কতটা স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হবে?
নাছিম: এর আগে মিনিট গুনে সরকার উৎখাতের কথা বলা হয়েছিল। এমনও বলা হয়েছিল, তফসিলই ঘোষণা করতে পারবে না। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন এই হবে, সেই হবে—এমন কথাও শোনা গেছে। এরপর বলছে প্রচার করতে দেওয়া হবে না। এবার বলছে ভোটাররা আসবে না। কিছুই হয়নি। সামনেও কিছু হবে না। ভোটাররা আসবে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হবে।
দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া আপনাদের একটি ‘কৌশল’-এর অংশ বলে জানি। কিন্তু এখনই বিভিন্ন স্থানে মারামারি, উত্তেজনা ও সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। এর মাধ্যমে কি দলে একটি স্থায়ী ক্ষত তৈরি হতে যাচ্ছে?
নাছিম: টুকটাক যা হচ্ছে, তা খুব বড় কিছু নয়। আচরণবিধি ঠিকঠাক মেনে চললে এটা হতো না। দলের পক্ষ থেকে সবাইকে আচরণবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সহিংসতার কোনো সুযোগ নেই। যারা সহিংসতা করবে, দায়দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে।
এবারের নির্বাচনের পর বিরোধী দল কে হবে, এটা নিয়ে একটা কৌতূহল দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরোধী দল হওয়ার সুযোগের কথা বলছেন। আপনি কী মনে করেন?
নাছিম: সরকারি দলের চেয়ে যারা কম আসন পাবে, তারাই তো বিরোধী দল হবে। সরকারের বাইরে সবাই বিরোধী দল হতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে প্রধান বিরোধী দল কে হবে? এটা তো আগাম নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার হোসেন