আপনি মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নতুন সদস্য হয়েছেন। কী চিন্তা থেকে রাজনীতিতে যোগ দিলেন?
মাহবুবুর রহমান: রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে চাই, তাই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। রাজনীতি করাকে এখন অনেকে প্রায় আবর্জনার মতো মনে করেন। এ চিত্র পাল্টাতে হলে শিক্ষিত তরুণদের বেশি করে রাজনীতিতে আসতে হবে।
বিএনপিতে যোগ দিলেন কেন? কোনো কারণ আছে?
মাহবুবুর রহমান: সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বিএনপি ২০২৩ সালে ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করে। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তারা সংস্কারে যে ৩১ দফা দিয়েছে, তা দেখে মনে হয়েছে এর অনেকগুলো ধারা নিয়েই সরাসরি কাজ করা সম্ভব। আর আমাকে দেখে অন্য তরুণেরাও রাজনীতিতে যুক্ত হতে আগ্রহী হবে বলেও মনে করছি। এ ছাড়া ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, আমার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি বিএনপির আদর্শ ধারণ করেন। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক। এই দলে থেকে শহীদ ও আহতদের নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ আছে।
আপনি কি নির্বাচনে অংশ নেবেন? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ তো বলছে, আপনি ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে নির্বাচন করবেন?
মাহবুবুর রহমান: মনে রাখতে হবে, আমি এখন পর্যন্ত শুধু বিএনপির একজন সদস্য। দলের শুভাকাঙ্ক্ষী কর্মী। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেই। আমি যেহেতু একটি দলের সদস্য হয়েছি, সেহেতু এখন ব্যক্তিগত ইচ্ছা বলতে কিছু নেই। দল যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী কাজ করব।
নির্বাচন নিয়ে কেউ কেউ অনিশ্চয়তার কথা বলছে। আপনার কী মনে হয়?
মাহবুবুর রহমান: একটি কুচক্রী মহল নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চালালেও তা সফল হবে না। জনগণই এই মহলকে দাঁতভাঙা জবাব দেবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচন হতেই হবে, নির্বাচন হবে।
আপনি জুলাই শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর যমজ ভাই। মুগ্ধসহ শহীদেরা যে ধরনের বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে জীবন দিলেন, তা কতটা পূরণ হয়েছে?
মাহবুবুর রহমান: সত্যিকার অর্থে আমরা সে ধরনের বাংলাদেশ এখনো গড়তে পারিনি। রাজনৈতিক দল এবং জনগণের মধ্যে ঐক্য থাকলে মুগ্ধসহ শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে। আর সবকিছুর মূলে তরুণদের ভূমিকা রাখতে হবে। এই তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করতেই রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছি। আমি মনে করছি, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের নিয়ে যে কাজগুলো করতে চেয়েছিলাম, বিএনপির সঙ্গে যুক্ত থেকে তা যথাযথভাবে করতে পারব।
আপনি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। গত ৮ মে এ পদ থেকে সরে দাঁড়ান। সেসময় সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, উচ্চশিক্ষার জন্যই আপনি এ পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এখন তো আবার রাজনীতিতে যোগ দিলেন...
মাহবুবুর রহমান: আমি ফাউন্ডেশনটির গভর্নিং বডির (পরিচালনা পর্ষদ) নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ স্কাউটসের উপপ্রধান জাতীয় কমিশনারের দায়িত্বে আছি। আমি ইতালির ইউনিভার্সিটি অব নেপলসে পড়াশোনা করছি। পড়াশোনা প্রায় শেষ পর্যায়ে বা একাডেমিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে বলা যায়। একটি থিসিস (গবেষণাপত্র) জমা দেওয়ার কাজ বাকি আছে। তাই এখন রাজনীতিতে যোগ দিলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে না বলেই মনে করছি।
একটা অভিযোগ আছে যে, আপনি মাঝপথে ফাউন্ডেশনের সিইও পদ ছেড়ে দেন দায়িত্ব পালন এড়াতে। কী বলবেন?
মাহবুবুর রহমান: আমি ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব শুরুতেই নিতে চাইনি। প্রধান উপদেষ্টা ও নাহিদ ইসলামের (এখন এনসিপির আহ্বায়ক) অনুরোধে দায়িত্বটি নিই। তখনই বলে রেখেছিলাম, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমি সরে যাব। কারণ আমার পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে। ফাউন্ডেশনের জরুরি সময়ে দায়িত্ব পালন করেছি এবং জুলাই শহীদ ও আহতদের জন্য ভূমিকা রাখতে পেরেছি।
তরুণদের নিয়ে আপনি যে ধরনের বাংলাদেশ গড়তে চাচ্ছেন বা রাজনীতিতে যে পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, তা কতটুকু সম্ভব?
মাহবুবুর রহমান: অসম্ভব বলে কিছু নেই। কোনো কাজে চেষ্টা না করেই এটা সম্ভব না, ওটা সম্ভব না—এভাবে বললে তা যুক্তিযুক্ত হবে না। তাই কাজটা শুরু করতে হবে।