যথাসময়ে সংবিধান মেনে নির্বাচন, ১৪ দলে সন্দেহ না রাখার পরামর্শ 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ১৪ দলের সভায় বক্তব্য দেন। বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩
ছবি: পিআইডি

যথাসময়ে সংবিধান মেনে নির্বাচন হবে—এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ না রাখার জন্য ১৪ দলের শরিকদের পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে ১৪ দল অংশ নেবে বলে জানান তিনি। 

গতকাল বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে। 

বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, প্রায় আড়াই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে শরিক দলগুলোর প্রায় সবার বক্তব্য শোনেন জোটের প্রধান শেখ হাসিনা। শরিকেরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তৎপরতা নিয়ে কথা বলেন। কেউ এই তৎপরতাকে ষড়যন্ত্র, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন। প্রায় সব বক্তা নির্বাচন ও বিদেশিদের তৎপরতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান-ভূমিকার প্রশংসা করেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত, বক্তব্যের সমর্থন করেন। 

শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে একাধিকবার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সবশেষে নির্বাচন নিয়ে তাঁর বার্তা পরিষ্কার করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতই ষড়যন্ত্র হোক, নির্বাচন যথাসময়ে, সংবিধান মেনে হবে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা জোটের শরিকদের বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। তাঁর বিশ্বাস, সব দল ভোটে অংশ নেবে।

বৈঠকে উপস্থিত সূত্র বলছে, বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ২০১৮ সালে গুরুত্ব দিয়ে ভোট করেনি। তাদের লক্ষ্য ছিল নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। এবারও তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। তবে আওয়ামী লীগ সতর্ক আছে। জনগণ তাঁর পাশে আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতেও নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। তা মোকাবিলা করে এগিয়ে গেছেন তিনি। এবারও তা করতে সক্ষম হবেন।

সূত্র জানায়, বিশ্বরাজনীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে চলার নীতি তাঁর। তবে বিশেষ কারও কাছে মাথা নিচু করবেন না।

 সূত্র বলছে, দুজন নেতা ১৪-দলীয় জোট সম্প্রসারণের বিষয় তোলেন। তবে বেশির ভাগ নেতা বিরোধিতা করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলকে আদর্শিক জোট উল্লেখ করে বলেন, এই জোট সম্প্রসারণ হবে না। তবে ভোটের মাঠে প্রয়োজনে অন্যদের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য হতে পারে।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলাকে পূর্বপরিকল্পিত অন্তর্ঘাত (স্যাবোটাজ) বলে মন্তব্য করেন। হিরো আলমকে কারা দাঁড় করিয়েছে, কে টাকা দিয়েছে, সেটাও খোঁজে দেখার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে উপস্থিত সূত্র আরও জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি রোধে ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান অনেক শরিক দলের নেতা। প্রায় সবাই ১৪ দলের তৎপরতা তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিসিবির কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যসহায়তা অব্যাহত থাকবে। এতে এক লাখ পরিবার উপকৃত হচ্ছে। পাটশ্রমিকদের জন্যও সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। 

শরিক দলের একজন নেতা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও এবি পার্টির সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধিদলের বৈঠকের সমালোচনা করেন। আরেকজন নেতা বিএনপির পদযাত্রা দিন দিন অশান্ত হবে বলে মন্তব্য করেন। আর এই সুযোগে জামায়াত হত্যাকাণ্ড চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নির্বাচনী প্রচার শুরু এবং জোটের মধ্যে আসন সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা শুরু করার কথাও শরিকদের কেউ কেউ বলেছেন বলে সূত্র জানায়।

গত রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাব সম্পর্কে জানানো হয়। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা অসম সাহসিকতা, প্রজ্ঞা, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে যখন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন বাংলাদেশকে তার সৃষ্টির মূল আদর্শ থেকে জাতিকে বিচ্যুত করার এক সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে। চক্রান্তকারীরা অপশক্তির সহায়তায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপে উৎসাহিত করছে। 

বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে আরও বলা হয়, একটি চিহ্নিত মহল দেশের সাংবিধানিক সরকারব্যবস্থা ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের লক্ষ্য সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ও চলমান উন্নয়নের গতিধারাকে ব্যাহত করা। পাশাপাশি চক্রান্তকারীরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভন্ডুল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। জনগণের স্বার্থ পরিপন্থী কোনো প্রকার অসাংবিধানিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ১৪-দলীয় জোট কখনো আপস করবে না। 

বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে শেখ হাসিনা ছাড়াও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করেন। জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাউজভাইন্ডারী, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলাম খান ও অসিত বরণ রায় অংশ নেন।