ছাত্র ইউনিয়নের ঐক্যবদ্ধ সম্মেলনের উদ্বোধন, অনৈক্যের অবসান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাত্র ইউনিয়নের ‘ঐক্যবদ্ধ ৪১তম জাতীয় সম্মেলনের’ উদ্বোধন হয়
ছবি: সংগৃহীত

দুই বছর পর এক মঞ্চে দেখা গেল বাম ধারার ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের দুই অংশের নেতাদের। জাতীয় সম্মেলনের প্রক্রিয়া নিয়ে মতপার্থক্য ও নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের জেরে বিভক্ত সংগঠনটির দুই পক্ষের নেতারা ‘ঐক্যবদ্ধ ৪১তম জাতীয় সম্মেলন’ উপলক্ষে এক মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড়ালেন, করলেন শোভাযাত্রাও। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আবার এক হতে যাচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন, অবসান হতে যাচ্ছে অনৈক্যের। আগামীকাল শুক্রবার ও পরদিন শনিবার সংগঠনটির সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন হবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে স্থাপিত মঞ্চে ছাত্র ইউনিয়নের ৪১তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। কথা ছিল আজ বেলা ১১টায় শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। কিন্তু সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় সাড়ে তিন ঘণ্টা দেরিতে বেলা দেড়টায়। সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের পরিবর্তে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতা এম এম আকাশ।

ছাত্র ইউনিয়নের এই সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক এম এম আকাশ। সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘৪০তম সম্মেলনের পর থেকে ছাত্র ইউনিয়ন দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে কাজ করছিল। এতে জনগণ ও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্র ইউনিয়নেরও অনেক ক্ষতি হচ্ছিল৷ শহীদবেদিতে মালা দেওয়ার ক্ষেত্রেও ছাত্র ইউনিয়নের দুই অংশের মধ্যে বিভেদ দেখা যাচ্ছিল। এটাতে আমরা খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম। আমি আশা করব, এই সম্মেলনের মাধ্যমে আজ এই অনৈক্যের অবসান হবে। কবে সেই দিন হবে, যেদিন ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা ওদের (ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন) স্যান্ডেল দিয়ে পিটিয়ে হল থেকে বের করবে? আমরা সেই ধরনের ছাত্রনেতৃত্বের আশায় রয়েছি।’

এম এম আকাশ আরও বলেন, সম্মেলন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঐক্যের প্রথম পদক্ষেপ গৃহীত হলো। এখন তাদের একসঙ্গে বসে কাউন্সিল অধিবেশন করতে হবে। একসঙ্গে বসে তাদের রাজনৈতিক প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে, সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন, সাংগঠনিক প্রতিবেদন—এগুলো গ্রহণ করতে হবে। আশা করব, ধাপে ধাপে শান্তিপূর্ণভাবে এই কাজগুলো করে যেদিন তাঁরা চায়ের কাপে চুমুক দেবেন, সেদিন দেশবাসী ও সারা দেশের ছাত্র ইউনিয়ন তাঁদের আরেকবার অভিনন্দন জানাবে। সেই কাজটা যত দ্রুত করা যায়, ততই ভালো। এটাকে ঝুলিয়ে রাখা চলবে না। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে এটা করতে হবে।

ছাত্র ইউনিয়নের ৪১তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মী ও অতিথিরা
ছবি: সংগৃহীত

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলনে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়নের বীর শহীদদের নামে আমি শপথ গ্রহণ করছি যে, আজকের পর থেকে ছাত্র ইউনিয়নে আর কোনো সংকট থাকবে না। সব সংকট নিরসন করে আমরা আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাব। বর্তমান সরকার অগণতান্ত্রিকভাবে ভোট চুরির মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ কায়েম করে দেশ পরিচালনা করছে। এর বিরুদ্ধে ১৪ বছর ধরে ছাত্র ইউনিয়ন লড়েছে। আমাদের লড়াইয়ের পথে যারা বাধা হয়ে দাঁড়াতে চায়, আমরা তাঁদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিতে চাই, ছাত্র ইউনিয়নের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম চলবে।’

সম্মেলন উদ্বোধনের সময় মঞ্চে আরও ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু, অন্য অংশের সহসভাপতি অনিক রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক মিখা পিরেগু প্রমুখ। মঞ্চের সামনে ছিলেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বর্তমান সভাপতি শাহ আলমসহ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতারা। অন্যান্য বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতারাও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পর অপরাজেয় বাংলা থেকে একটি ঐক্যবদ্ধ শোভাযাত্রা বের করেন ছাত্র ইউনিয়নের দুই অংশের নেতারা।